Thursday, December 21, 2017

মনজুশ্রী'দির কথা ভেবে লেখা

মনজুশ্রী'দির কথা ভেবে লেখা
গত এপ্রিল মাসে কলকাতায় আপনার সাথে দেখা করেছিলাম। দেখার জায়গাটা ছিল  নার্সিং হোম , যেখানে দিন আগেই আপনি এডমিট হয়েছিলেন। অসময়ে রুগীর সাথে দেখা করা যায় না, অনেক দূর থেকে এসেছি শুনে দেখা করার অনুমতি পেয়েছিলাম। ওই অবস্থায় আপনাকে না দেখতে পেলেই খুশি হতাম, কিন্তু একটা জিদ মাথায় ভর করেছিল -- ডি.গুপ্ত লেনের বাড়িতে ঢোকার গলির দরজায় মাঝে মাঝে দেখা শাড়ি পড়া সেই বৌদিকে একবার দেখতেই হবে। সেটা সেই ১৯৬০' গোড়ার দিকের  ছবি। কিন্তু ছবিটা মিললো না, অসুস্থতার জন্য না, অনেক বয়ে যাওয়া সময়ের জন্য। মাথায় পাকা চুল, চোখে চশমা, কপালে বয়েসের ভাঁজ। সেই প্রথম আপনার সাথে কথা, কাছে থেকে। শরীরের যন্ত্রনা ঢাকা পড়ে ছিল মুখের সুন্দর হাসিতে। বেশি কথা বলার পরিস্থিতি ছিল না। "ভালো থাকবেন, খুশিতে থাকবেন,মনের খুশি অসুখকে দূরে রাখে"। উত্তরে বলেছিলেন, "আপনাদের দাদা কেমন সুন্দর কাউকে ঝঞ্ঝাট না দিয়ে চলে গিয়েছেন আর আমি...."। একটা আক্ষেপ ছিল আপনার -- "উনি তেমন স্বীকৃতি পান নি"। উত্তরে আমি বলেছিলাম যে সব স্বীকৃতি 'সদন" বা 'ভবন"-এ দেওয়া হয় না, ওনার আসল স্বীকৃতি জমা আছে মানুষের মনে --  শুনে চাপা গর্বের হাসি দেখেছিলাম আপনার মুখে। সেই পাঁচ মিনিটের সাক্ষাতে আপনার সাথে যা কথা বলেছি তার থেকে অনেক বেশি কথা বলেছি গত এক বছরে, টেলিফোনে। আমি বলার আগেই গানের প্রথম লাইন আপনি বলেছিলেন – “ফুলের বনে লাগলো যে দোল গুনগুনিয়ে"। "আমার কাজ ছিল বাড়ীতে লোক আসলে তাদের থাকার বা জলখাবারের ব্যবস্থা করা, গানের মধ্যে তেমন থাকতাম না"। আপনার মুখেই শোনা সুধীনবাবু গানের জীবন শুরু করেন কমল দাশগুপ্ত মশাইয়ের সহকারী হিসেবে। কখনো যদি কোনো কারণে টেলিফোন না নিতে পারতেন, পরে অবশ্যই নিজে ফোন করতেন বা লিখে জানাতেন -- এমন ছিল আপনার সুন্দর অমায়িক ব্যবহার।
এতদিন পরে এই লেখা লেখা কেন ?  সম্প্রতি ফেসবুকে আপনার পরিবার থেকে পোস্ট করা একটা ছবি দেখলাম যেটা সেই ১৯৬০- ছবির মতো -- তখনো মনে হয় তিরিশের চৌকাঠে পা রাখেন নি, কোলে এক শিশু, পাশে আপনার গর্বের স্বামী। এই শ্রদ্ধার্ঘ্যর প্রেরণা সেই পুরানো ছবি। আপনার সাথে আর কথা বলা হবে না, ভেবে আফ্সোস হয় -- কত জিজ্ঞাসা জমা ছিল -- ভেবেছিলাম আপনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে পর এক এক করে জানবো পুরানো অনেক না জানা কথা -- সেটা আর হলো না।  দিদি, আপনার আত্মা শান্তিতে থাকুক।