সিঁথীর আরও গল্প –
ফ্ল্যাশব্যাক: ১৯৫৫ / ১৯৬০
জমজমাট সিঁথীর
মোড়, সন ২০১৮, এক সকাল ১১টা। ট্রাফিকের লাল বাতি জ্বলতেই ব্রেক-চাকা-রাস্তার ঘর্ষণের চমকানো
আওয়াজ তুলে যানবাহন থেমে গেলো সাদা লক্ষণরেখা ছুঁয়ে, রাস্তা পার হওয়ার জন্য জোয়ারের ঢেউয়ের মতো লোক আছড়ে পড়লো রাস্তায়, তার মিনিট খানেক বাদে বাতি নিভলেই ভীমরুলের চাকে যেন ঢিল
পড়েছে, বাস ট্যাক্সি মোটর গাড়ী বাইক সব গর্জন করে চলা
শুরু করলো।
সিঁথী যাবার
রাস্তার ডান দিকে, মানে আগের এম.পি.
ষ্টুডিওর উল্টাদিকে কয়েকটি দোকানের সারি, সামনেই একটা
ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। (আগে ওখানে ছিল বিরাট পুরানো ভাঙা বাগানবাড়ী (সিঁথীর মোড় থেকে কালীবাড়ি পর্যন্ত,এত বড় -- বিপরীতে ছিল আরো এক বাগানবাড়ী ও RBT স্কুল)। রাস্তায় ট্যাক্সি না পেয়ে গেলাম সেই স্ট্যান্ডে,
একটা খালি ট্যাক্সি সেখানে ছিল। চারদিকে দেখি তৃণমূলের
পতাকা টাঙানো, বসে-দাঁড়িয়ে আছে ৪-৫ জন
"মুঝে পহেচানো" ভাবভঙ্গীর বাহুবলী। ড্রাইভার না দেখতে পেয়ে তাদের কাছে
খোঁজ নিতে গেলে জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাবো আমি। এয়ারপোর্ট যাবো শুনে বললো
"চারশো টাকা পড়বে"। বড়জোর ১৫০ টাকার দৌড়, আর ৪০০ টাকা ? বলাতে উপেক্ষার
সুরে জানালো "যেতে হলে ওই ভাড়ায় রাজি হোন, নয়তো পথ দেখুন"। দেরী হয়ে গেছে, ইতিমধ্যেই মিনিট তিরিশ
নষ্ট করেছি ট্যাক্সির খোঁজে, অগত্যা রাজি হতেই
হলো ৪০০ টাকায়।
পঞ্চাশের দশকের
শেষভাগে এই সিঁথীর মোড়ের দৃশ্য অন্য ছিল -- মানুষ, যানবাহনের ভীড়তো ছিলই না, কোনো ব্যস্ততাও
নজরে পড়তো না।
কাশীনাথ দত্ত
রোডের দুপাশে দেখুন। ষ্টুডিওর মুখে চায়ের আর মিষ্টির দোকানটা তখনও ছিল, সামনেই দোকানের ফেলা শালপাতা, মাটির ভাঁড় আর চা পাতা থেকে জমে
ওঠা ছোট ঢিপি। উল্টা দিকে ছোট বট গাছ ঘিরে
ছিল রিক্সা স্ট্যান্ড, লাগোয়া ছিল এক ভাঙাচোরা
চায়ের দোকান, যেখানে রিকশাওয়ালারা
রুটি-ঘুগনী খেতো দুপুরে-রাত্রে। এর পিছনেই ছিল এক পাঁচিলভাঙ্গা জনহীন বাগানবাড়ী,
যার মাঠে ধোবীরা কাপড় শুকাতো। এই বাগানবাড়ীর লাগোয়া ছিল কার্টার পুলার কোম্পানীর
কর্মব্যস্ত কারখানা --সেই সাইকেল-টিফিনবক্স-কাঁধে ঝোলা- হাতে ছাতা নিয়ে শ্রমিকদের
পথচলার দৃশ্য, যেমন হতো বেঙ্গল
ইম্মুনিটির সামনে। উল্টাদিকের ষ্টুডিওর গল্প আগেই করেছি, অন্য এক প্রসঙ্গে।
বি.টি.রোডের
উল্টাদিকে (মানে সিঁথী/ন'পাড়ার দিকে) ছিল
টালির চালের কিছু দোকান ও বসত, বাস স্ট্যান্ড
লাগোয়া রিক্সা স্ট্যান্ড। ওখানেই ছিল "স্বপ্নশ্রী" নামের এক যাত্রাদল --
প্রায় সন্ধ্যায় হ্যারিকেনের স্বল্প আলোয় রিহার্সাল হতো "গান্ধারী" পালার
-- বলরাম আর কৃষ্ণ পরিকল্পনা করছে "কৌরবের শেষ চিহ্ন" মুছে ফেলার,
সে কথা কানে যেতেই চোখে পট্টি বাঁধা দ্রৌপদী দুই ভাইয়ের
সামনে এসে আহত অভিমানে বললো, "কৌরবের শেষ চিহ্ন
আমি, তবে আমায় আগে হত্যা করো"।
মোড়ের মাথায় না
ছিল কোনো স্ট্রিট লাইট, ট্রাফিক পুলিশ এসেছিল
অনেক পরে। পদ্মজা নাইডু বছরে একবার ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটে যেতেন, তখনি সিঁথির মোড়ে দেখা যেত কিছু পুলিশ।
সেই শেষ পঞ্চাশ
দশকে সিথীর মোড়ে একটাই ট্রাফিক পুলিশ, বি টি রোডে
নামমাত্র ট্রাফিক থাকায় বেশিরভাগ সময় সে আলস্যে হয় গাছের নিচে কিংবা চায়ের
দোকানে বসে সময় কাটাতো। ওটা আমার স্কুল যাবার পথ। মাঝে মাঝে দেখতাম পুলিশ বাবু খুব
সক্রিয় হয়ে উঠে রাস্তার গাড়ি-ঘোড়া সামলাচ্ছে, ঠিক চৌমাথায় দাঁড়িয়ে। হঠাৎ সে সব যানবাহন দাঁড় করিয়ে দিল, সবাই দেখলো সামনে দুটো মোটরবাইকে সাদা পোশাকের দুটো পুলিশ
অফিসার মাঝখানে একটি কালো গাড়ি, আর তার পেছনে
একটি পুলিশের গাড়ি। মাঝখানের মোটরগাড়িতে কে আছেন সেটা দেখার আগেই কনভয় দৌড়ে
চলে গেল ব্যারাকপুরের দিকে। গাড়িতে ছিলেন রাজ্যপাল শ্রীমতি পদ্মজা নাইডু, প্রতিবছর এই রাস্তা দিয়েই যেতেন ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটে,
মহাত্মা গান্ধীকে প্রণাম জানাতে। কনভয় চলে যাবার দু মিনিট
পরেই রাস্তা যানবাহন আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত।
সন্ধ্যার পর
মোড়ের বটগাছের নিচে ভূইঁফোড় একটা ছোট মন্দির, আর সেখানেই জমতো এক ছিলিম নেশার আড্ডা, ট্রাফিক পুলিশ ব্যবস্থা চালু হবার পর সে আড্ডা অনেক গোপনে চলতো। পুলিশ আসার পর
শুরু হলো ডানলপের দিক থেকে আসা ট্রাক বা মালবাহী বাহনের ড্রাইভারদের থেকে টাকা
তোলা -- পুলিশের ইঙ্গিতে একটা ছেলে হাত তুলে দৌড়ে যেত গাড়ির দিকে, ড্রাইভার বা ক্লিনার তার
হাতে বা দূর থেকে ছুঁড়ে দিতো টাকা/আধুলি। সেটা পকেটে পুরে সে পরে রাস্তার
এক কোনে গিয়ে পুলিশের সাথে হিসেবে নিকেশ
করতো।
সময়ের সাথে
সিঁথির মোড় তার চেহারা চরিত্র পাল্টেছে -- পাল্টায়নি শুধু ওই ষ্টুডিওর গেট ঘেঁষা
চা আর মিষ্টির দোকান।
ফুটবল ক্রিকেট সাইকেল-প্রতিযোগিতা
সিঁথীর জনজীবনে
অনেক বৈচিত্র্য ছিল. কালীতলার বাস স্ট্যান্ডের পাশে খোলা জমিতে ছিল এক পোড়ো ঘর,
ইঁটের পাঁজরা বেরিয়ে এসেছে, তার দেয়ালের গায়ে মাথা ওঠাচ্ছে বটগাছ -- একটাই ঘর কিন্তু বেশ বড় মাপের।
সেখানেই পাড়ার ছেলেরা বানালো তাদের ক্লাব "শিবনাথ স্মৃতি সংঘ"।
ভেতরে লাইট
জ্বালিয়ে সন্ধ্যার পর বড় বুড়োরা তাস ক্যারাম খেলতো, সামনের ছোট জমিতে বানিয়ে ছিল বাহারি ফুলের বাগান -- শীতকালে সূর্যমুখী
চন্দ্রমল্লিকারা রূপের হাট বসাতো। ওখানেই হতো পাড়ার সব সার্বজনীন পূজাগুলি। পাশেই
ছিল বড় এক পুকুর, যার অর্ধেক ঢাকা থাকতো
কচুরিপানা আর তার নীল ফুলে। তার লাগোয়া ছিল ফুটবলের মাঠ -- শিবনাথ স্মৃতি
চ্যালেঞ্জ কাপ খেলতে ওই অঞ্চলের বাইরে অনেক দূর দূর থেকে টীম আসতো -- আন্দুল থেকে
এসে কাপ জিতে নিয়ে যেত, বনগাঁ থেকে আসতো টীম,
বেঙ্গল ইম্মুনিটির টীম খুব লোকপ্রিয় ছিল, বিশেষ করে তাদের ব্যবহার ও সততার জন্য। অনেক দর্শকের মধ্যে
এক মাঝবয়েসী নিয়মিত ছিলেন, যার ছিল ফিট-এর
ব্যামো। অনিবার্যভাবে প্রায় সব ম্যাচেই
লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই উৎসাহীর কপালে মাথায় বল এসে লাগবে, সে হাত-পা খিঁচিয়ে মাটিতে পরে যাবে, লোকেরা পাশের পুকুরের জল মাথায় ঢেলে তার সম্বিৎ ফেরাবে -- ওদিকে ম্যাচ চলতে
থাকবে তার আপন গতিতে, ব্যাপারটা এমনই
সামান্যতার পর্য্যায়ে পৌঁছেছিল। ওই মাঠেই ফুটবল খেলে অনেকে পরে কলকাতা লীগের প্রথম
ডিভিশনের "ঐক্য সম্মেলনী" টিমে খেলেছে, পেয়ারাবাগানে ছিল সেই ক্লাবের ঘর।
শীতকালে এই মাঠেই
টেনিস বলে ক্রিকেট খেলা হতো, বড়রা না থাকলে
আমরাও পেয়ারা গাছের ডাল ভেঙে উইকেট বানিয়ে খেলতাম।
শিবনাথের একটা
নামকরা বার্ষিক ইভেন্ট ছিল অবিরাম সাইকেল চালানো প্রতিযোগীতা, যে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাবে, সে পাবে একটা নতুন সাইকেলের পুরস্কার। রুটটা ঠিক মনে নেই, কিন্তু বৃত্তাকার রুট কালীতলা, ডি.গুপ্ত লেন, ফকির ঘোষ কলোনী আবছা মনে
আছে. প্রতিযোগীদের সাইকেলে বসা অবস্থায় জল সরবত দেওয়া হতো, নামার উপায় নেই, স্বেচ্ছাসেবীদের নজর
সজাগ। অনেক প্রতিযোগী অংশ নিত, খবরের কাগজের
হকাররাতো খুব আশা নিয়ে নামতো -- শুরুতে প্রায় ৩০/৪০ জন প্রতিযোগী থাকতো, সন্ধ্যা বাড়লে কমে অর্ধেক, আর রাত্রিভোরে দেখাযেত বড়জোর ৫/৬ জন ক্লান্ত পায়ে টেনে চলেছে সাইকেল। যারা পরের দিন সকাল পর্যন্ত টিঁকে থাকতো,
তাদের গলায় লোকেরা টাকার মালা, ফুলের মালা পরিয়ে দিতো -- মোটামুটি দ্বিতীয় দিনের দুপুর পেরোতেই দেখা যেত বাকি
সবাই থেমে গেছে, একমাত্র যে বহাল আছে,
তাকেই বিজেতা বলে ঘোষণা করে মহা ধূমধামে তাকে নিয়ে
শোভাযাত্রা বের হতো, আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে
পুরস্কার দেওয়া হতো।
পাড়ায় ছিল এক
ধোবি, শিবনাথের পেছনের পুকুরপাড়ে বড় মাটির উনুনে
মাটির গামলায় কাপড় ফোটাতো সোডা সাবানের গরম জলে, কাঠের পাটাতনের ওপর মুখে চাপা আওয়াজ তুলে কাপড় আছড়াতো, পুকুরের জলে ধুয়ে লম্বা টাঙানো দড়িতে সেই কাপড় শুকাতো। পরে শুকনো কাপড় জামা
ইস্তিরি করে সাইকেল নিয়ে বেরোতো ডেলিভারী দিতে। সেই ধোবি পর পর ২ বছর জিতেছিল সেই
পুরস্কার -- পুরানো সাইকেল বেচে পুরস্কারের নতুন সাইকেলে চড়ে সে কাপড়ের পোটলা নিয়ে
বেরোতো, এখন তার সাইকেলে পুরো চেইন-কভার আছে, ভালো স্প্রিংএর ঘন্টা আছে,ব্যাটারীর লাইট আছে, আছে চওড়া
ক্যারিয়ার।
(রানী রাসমণির বাগানবাড়ীর পুকুরেই কালীতলা-ফকিরঘোষ কলোনীর সবাই সাঁতার শিখতো, বড়োরা বাঁধানো ঘাটের উঁচু চাতাল থেকে লাফ মারতো, এপার ওপার করতো। এক বোরো দুর্ঘটনায় এখানেই জলে ডুবে মারা যায় ফকিরঘোষ কলোনির এক তরুণ -- সে এক বড় দুঃক্ষজনক ঘটনা। এখন আর নেই সেই শিবনাথের মাঠ, আম সুপারি পেয়ারা নারকেল গাছ ঘেরা বাগানবাড়ি, নেই সেই ছায়াঘেরা পুকুর -- সব এখন বাড়িঘরে ভরা) ।
নেতাজীর জন্মদিন
-- পহেলা বৈশাখ
প্রতি বছর নেতাজীর জন্মদিনে সিঁথীতে প্রভাতফেরী হতো। প্রায় ২০ ফুট উঁচু পরিচিত যুদ্ধবেশে সজ্জিত নেতাজীর এক বিশাল মাটির মূর্তি ট্রাকে করে নিয়ে সুন্দর সুশৃঙ্খল শোভাযাত্রা বের হতো। গাড়ীর আগে থাকতো ছোটদের ব্যান্ড-কুচকাওয়াজের দল -- সাদা জামাকাপড়, কোমরে বেল্ট, সাদা জুতা, মাথার কালো টুপীর ওপর রঙিন পালক -- কারোর হাতে ব্যান্ড, কারোর হাতে বাঁশী -- সব চাইতে সামনের ছেলেটার হাতে একটা ছড়ি -- চলেছে গান গাইতে গাইতে "উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল"। নেতাজীর তেজভরা দীপ্ত মুখ দেখে কিশোরে মন বলতো, আমি থাকলে ছুটে যেতাম ইম্ফলে, দিল্লীর যাত্রা অবশ্যই শেষ করতাম। পহেলা বৈশাখেও প্রভাতফেরী হতো, মাইক্রোফোন লাগিয়ে অল্প বয়েসী উজ্জ্বল মেয়েরা লালপেড়ে সাদাশাড়ী পড়ে ট্রাকের ওপর বসে-দাঁড়িয়ে তাদের লম্বা বিনুনী দুলিয়ে গান গাইতো,"এসো হে বৈশাখ এসো এসো"। আর পূজার পর পাড়ায় পাড়ায় হতো বিজয়া সম্মেলনী, গান বাজনা নাটক আবৃত্তিতে ভোরে উঠতো সন্ধ্যাগুলো। কোথায় গেলো সে সামূহিক আনন্দউৎসবের দিনগুলি!
ভোটের কড়চা
ভোটের ঢাকে কাটি
পড়তেই সিঁথি-বরানগরে সাজো সাজো রব উঠতো। দেয়ালে ছাপানো পোস্টার আটা-ময়দার আঠা দিয়ে
লাগাও, রঙীন চিত্রকারী করো দেয়ালে পাঁচিলে, দলের প্রতীক এঁকে ও প্রার্থীর নাম লিখে। ষাটের শুরুতে তার
সাথে যুক্ত হলো স্লোগান লেখা, তথ্য দিয়ে
প্রতিপক্ষকে কাবু করা, ব্যঙ্গ চিত্র আঁকা
ইত্যাদি। পার্টি অফিসে যাও, দেখবে মাটিতে বসে
সমর্থকেরা একের পর এক পোস্টার লিখছে, চায়ের দোকান থেকে
মাঝে মাঝে আসছে মাটির ভাঁড়ে চা, চা শেষে সেই
ভাঁড়কেই ছাইদান বানানো হতো, বিড়ি চারমিনারের
ধুঁযায় ঘর ভরে যেত।
রাত্রেই হতো
পোস্টার ব্যানারের কাজ, দিনে হতো শোভাযাত্রা
মিটিং পথসভা গণসংযোগ। নির্বাচন বিশেষে ওদিকে সুশীল পাল, এদিকে গণপতি সুর, ডানলপের ওপরে রাধিকা
ব্যানার্জী, টালার ওপারে লক্ষী সেনরা
সক্রিয় হয়ে উঠতো সমর্থকদের সাথে।
পাড়ায় পাড়ায় ঘরে
ঘরে গিয়ে ভোটদাতাদের সাথে প্রত্যক্ষ গণসংযোগ রাখা পঞ্চাশের দশকে খুব সাধারণ ঘটনা
ছিল। প্রার্থী তার দলবল নিয়ে হেঁটে বা সাইকেল চড়ে ছোট ছোট শোভাযাত্রা নিয়ে ঘুরতেন,
হাত জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে ভোট ভিক্ষা করতেন -- জোড়া-বলদ
কিংবা কাস্তে-ধানের-শীষ আঁকা দলীয় পতাকা নিয়ে।
কালীতলার
বাঙালবাড়ীতে অনেক ভোট, সবাই জানতো। কর্পোরেশনের
নির্বাচনে গণপতি সুর বাঁধা প্রার্থী ছিলেন কংগ্রেসের এবং জয়ীও হতেন। লাভ নেই জেনেও উনি বাঙালবাড়ীতে
আসতেন, সবার সাথে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, হাত মেলাতেন। ওপারের কাশীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী সুশীল পাল অনেক ভোট জিততেন, এপারের গণপতি
সুরের মতোই। কিন্তু চট্টগ্রাম
মামলার সাথে জড়িত বিপ্লবী গনেশ ঘোষ বিধানসভার নির্বাচনে কমিউনিস্ট প্রার্থী হয়ে
দাঁড়াতেই সিঁথীর রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গিয়েছিলো, বামপন্থীদের
প্রভাব ধীরে ধীরে বেড়েছিল। ।
সংসদীয়
গণতন্ত্রের শুরুর দিকে নির্বাচন নিয়ে নোংরামী বদমায়েশী বা হাতাহাতির রেষারেষি হতো
না, কে কাকে ভোট দেয় সেটা মোটামুটি সবার জানা
থাকতো। কিন্তু ভোটের পর তেমন তিক্ততা থাকতো না। বাঙালবাড়ীর লোকেরা রেশন কার্ড বা
ইলেকট্রিক কানেক্শনের ব্যাপারে যখনই সুপারিশের জন্য গেছে ওনার বাড়ীতে, গণপতি সুর বিনা প্রশ্নে আবেদনপত্রে সুপারিশ করে দিতেন।