Tuesday, February 22, 2022
গুজরাটের মেথীর গোটা
গুজরাটের মেথীর গোটা
সর্দারগঞ্জ (আনন্দ, গুজরাট) কৃষি উৎপন্নের বড় পাইকারী বাজার। চাল ডাল গম তেল মশলা -- সব পাবেন এই বাজারে। আর আছে নানান অন্য ব্যবসায়ী -- কেউ বিদেশযাত্রার ব্যবস্থা করে দেবে, কেউ গাড়ির পার্টস বিক্রি করছে তো কেউ কাপড়, সোনার দোকান বা ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান সাজিয়ে বসেছে -- নানান ব্যাঙ্ক ইন্স্যুরেন্স ইত্যাদি তো আছেই। চাকরী জীবনে এখান থেকে সারা বছরের রান্নার রশদ কিনতাম, উঁটগাড়িতে দোকানদার চাল ডাল তেলের টিন বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো।
সকাল আটটার আগেই দোকান সব খুলতে থাকে -- উঁট গাড়ি, সাইকেলভ্যান, অটো, নানান গাড়ির আওয়াজে ধীরে ধীরে জাগে গঞ্জ, একে একে সব দোকানের দরজা খুলে ঝাড়পোঁছ শুরু হয়। একটু পরেই সাইকেল মোটরবাইকে চড়ে আসবে কর্মচারীরদল, শহরতলি ও গ্রামাঞ্চল থেকে।
চারদিক দোকান-অফিস ঘেরা ঠিক মোড়ের মাথায় মেথীর গোটা (বড়া) বিক্রি করার রাস্তার দোকানটা ততক্ষনে বিশাল লোহার কড়াইয়ে প্রায় লিটার দশেক বাদামতেল গ্যাস-চুল্লিতে বসিয়ে দিয়েছে, বাতাসে কাঁচা বাদামের গন্ধ বেরোতে শুরু হলো বলে, পাশেই এক কর্মচারী বড়ো এক বস্তা মেথী শাক জলে ধুয়ে চাকু দিয়ে কাটতে বসেছে, অন্যজন বেসনের বস্তা খুলে বিশাল এক ডেচকিতে ব্যাসন জলে গুলছে -- এর পরেই বেসনে মাখা মেথী ভাজা হবে ফুটন্ত তেলে। গোটার সাথে আপনাকে তেলে ডুবিয়ে ভাজা কাঁচা লঙ্কা দেবে, একদম ঝাল নেই, নির্ভয়ে চেবাতে পারবেন।
যেই বড়ো লোহার ঝাঁঝরি হাতায় মেথীর গোটা তেল থেকে উঠিয়ে ঠন্ ঠন্ আওয়াজ করে তেল ঝরানো শুরু হলো, অমনি এতক্ষন ফাঁকা দোকানটি ঘিরে ফেললো আশেপাশের দোকান-অফিসে থেকে গুটিগুটি বেরিয়ে আসা নানা বয়েসী কর্মচারীরা -- সব কায়েমী খরিদ্দার, মুহুর্তে শেষ হয়ে যাবে প্রথমবারের সব ভাজা -- আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেকক্ষন।
মেথীর গোটা গুজরাটি স্পেশালিটি স্ন্যাক, ভালো বেসন আর টাটকা বাদাম তেলে ভাজা (অন্য তেলও ব্যবহার হয় --সর্ষের তেল বাদে) মেথীর গোটা গুজরাটি ভোজনবিলাসীর প্রাতরাশের এক আবশ্যিক অঙ্গ -- সাথে ফাফডা জলেবী আচারআদি তো আছেই।
সব দোকানের মেথীর গোটা যে সমান জনপ্রিয় তা না -- রসিকজন জানেন কোন দোকান থেকে কিনতে হবে। এমনিতে মোড়ের মাথায় বা হাইওয়েতে অনেক দোকানেই গোটা পাবেন কিন্ত আগের বানানো কিন্তু গরম করে দেওয়া মেথীর গোটা ভালো লাগবে না খেতে, বারবার এক তেলে ভাজলে বেসনের উজ্জ্বল রং টা কালছে হয়ে যায়, পছন্দ হবে না আপনার।
আহমেদাবাদের বস্ত্রাপুর লেকে সক্কাল সক্কাল চলে আসুন, নানান প্রাতরাশের উপহার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোটা ২০টা চারপেয়ে দোকান -- আপনার সামনেই বানিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণী পশ্চিমী গুজরাটি খাবার, তার মধ্যে আছে উত্তম বেসনে বানানো মেথীর গোটা -- প্রাতঃভ্রমনাকারীদের অনেকেই সপরিবারে সকালের ভোজনটা এখানেই সেরে নেয়।
হিম্মতনগর মোড় থেকে সোজা গেলে মাউন্টআবু, অন্য রাস্তা গেছে দিল্লির দিকে। মোড়ের মাথায় আছে অনেক ছোট ছোট খাবারের দোকান --পাবেন খুব ভালো মেথীর গোটা, যেকোনো সময় গেলেই তাজা বানিয়ে দেবে, মিনিট দশেকের অপেক্ষা।
হালদিঘাট, যোধপুর। দেখি নীমগাছের ছায়ার নিচে একটা ভাজাভুজির দোকান -- গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে যুবাবয়েসী দোকানদার খাতির করে বেঞ্চ পরিষ্কার করে বসার জায়গা করে দিলো। জিজ্ঞাসার উত্তরে যখন শুনলো আহমেদাবাদে থাকি, খুব খুশি -- এমনিতে আমাদের পড়শী মহল্লায় ওর আবাস, কিন্তু করোনার জন্য কাজ বন্ধ, তাই এখানে এসেছে এক আত্মীয়ের কাছে। শুধু শুধু বসে থাকবে, তাই এই দোকান। বানিয়ে দিলো গরম গরম মেথীর গোটা, ঠিক যেন বস্ত্রাপুরের স্বাদ, সাথে দিলো দই-বেসনের চাট, ঢেকী তুলে খাবার পর এলো বাদশাহী চা -- স্রেফ দুধে বানানো নানান মশলা দেওয়া চা।
কখনো গুজরাট এলে মেথীর গোটা না খেয়ে যাবেন না, যেমন কলকাতা গেলে আমরা সিঙ্গারা কচুরীর আবেদন উপেক্ষা করতেই পারি না।
Subscribe to:
Posts (Atom)