Tuesday, June 25, 2024

পিছন ফিরে দেখা

জলের দাগ ========= পূর্ববঙ্গের স্কুল ডেপুটি ইন্সপেক্টর ছিলেন দীননাথ সেন। উনি এবং আরও কয়েকজন প্রভাবশালী মিলে পুরান ঢাকা শহরের গেন্ডারিয়াতে অনেক জমি কিনেছিলেন -- পরে, তার নামেই পরিচিতি পায় গেন্ডারিয়ার প্রধান রাস্তা, দীননাথ সেন রোড। দীননাথের পুত্র আদিনাথ, সে তার পুত্র দিবানাথের সাথে বিবাহ দেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী রমা সেনের সাথে (পরবর্তীকালের কালজয়ী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন নামে যাকে আমরা চিনি)। আমার পিতামহ ঈশ্বর বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের বসতভিটার ঠিকানা যখন ১৩,দীননাথ সেন রোড ছিল তখন বঙ্গভঙ্গ অবশ্যই হয়েছিল, কিন্তু ভারতভঙ্গ হয়নি। ভারতভঙ্গের প্রাক্কালে বিপিনবিহারীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী পরিবার ওই বাসস্থানের উত্তরাধিকারী ছিল। বাড়িতে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অর্চনার নিমিত্তে পূজাগৃহ ছিল, যেখানে পরিবারের সবাই সন্ধ্যা-প্রার্থনায় হাজিরা দিয়ে মঙ্গল প্রার্থনা করতো। বাড়ির পাঁচিল ঘেঁষেই ছিল গেন্ডারিয়া গার্লস হাইস্কুলের সীমানা, বাড়ীর বড় ছেলেরা জগন্নাথ হলের রোজনামচা পেশ করতো নৈশভোজের সময়। দীননাথ সেন রোডেই ছিল অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের সাধনা ঔষধালয় (১৯১৪), আয়ুর্বেদ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান -- ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সৈনিকরা যোগেশবাবুকে হত্যা করে। পাটুয়াটুলীতে ছিল শ্রী আশুতোষ ধরের প্রতিষ্ঠান আশুতোষ লাইব্রেরী, তার প্রকাশনীর তালিকা বিশাল -- ভাষা সাহিত্য সঙ্গীত ইতিহাস লোকসাহিত্য ধৰ্ম -- সব বিষয়ে নানান প্রকাশনা ছিল, কলকাতা ও এলাহাবাদ থেকেও তাদের বই প্রকাশিত হতো। কিশোরে সাহিত্যের জনপ্রিয় মাসিক প্রকাশনী (১৯২২ প্রথম প্রকাশ) "শিশুসাথী" আশুতোষ লাইব্রেরীর বিশেষ পরিচিতি ছিল। আমার সোনাকাকা শ্রী বিনয় কুমার গঙ্গোপাধ্যায় আশুতোষ লাইব্রেরীর একজন সম্পাদক ছিলেন, নিয়মিত লিখতেন ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক কাহিনী। প্রচুর কিশোর সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনের জন্য কাকার নিজের সংগ্রহে যে সব বই ছিল, তার অনেকই উনি আমাকে উপহার দিতেন, ওনার দেওয়া বই থেকেই জেনেছি স্ত্রী-পরিধানে নূরজাহানের অবদান, দেখেছি পৃথিবীর "নীলকুন্তলা সাগরমেখলা রূপ" (বিভূতিভূষণ) -- ছোটবেলায় গুটি-বসন্ত থেকে আরোগ্যলাভের সময় ওনার দেওয়া ব্রিটানিয়া বিস্কুটের টিনের বাক্স অনেকদিন যত্ন করে রেখেছিলাম। সেন পরিবার, সাধনা ঔষধালয়, আশুতোষ লাইব্রেরী ঘিরে গেন্ডারিয়াতে বিদগ্ধজনের একটা আড্ডা বসতো, তাতে অন্য পেশায় থাকা বিশিষ্টরাও যোগ দিতেন। যেমন, জনপ্রিয় রহস্য কাহিনী লেখক ডাঃ নীহাররঞ্জন গুপ্ত (জন্মেছিলেন নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইটনায় ১৯১১ সালে) ছিলেন চর্ম রোগের একজন চিকিৎসকও। ওনার প্রথম গল্প "কালোভ্রমর" ও তার মূল চরিত্র কিরীট রায় বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের মাইলফলক মানা হয়, লিখেছেন আরও প্রায় ২০০ গল্প, অনেক সিনেমা ওনার গল্পের আধারে নির্মিত হয়েছিল (উল্কা, বাদশা, উত্তরফাল্গুনী, মায়ামৃগ, কোমলগান্ধার, নিশিপদ্ম ইত্যাদি)। জাদু সম্রাট পি.সি.সরকার (প্রতুল চন্দ্র সরকার, জন্ম ১৯১৩, গ্রাম অশেকপুর, টাঙ্গাইল) ছিলেন সেই আড্ডার আর এক সদস্য। এনারা সবাই আমাদের পারিবারিক হিতৈষী ছিলেন -- নীহারবাবু পরে দমদমে চেম্বার খোলেন, দরকারে আমরা যেতাম চিকিৎসার জন্য, জাদুকর প্রতুলবাবুর দরজা খোলা ছিল যে কোন সহায়তার জন্য আর অভাবনীয় সৌজন্য প্রকাশ করেছিলেন আদিনাথ -- যেহেতু গেন্ডারিয়ার বন্ধুরা (দেশ ভাগের ডামাডোলে) দীননাথ-রমার বিয়েতে হাজির ছিল না, উনি নিজে নতুন পুত্রবধূকে নিয়ে কলকাতায় বাড়ি বাড়ি ঘোরেন সামাজিকতা সারতে। টালীগঞ্জে সোনাকাকার বাড়িতেও এসেছিলেন। অনেক বছর বাদে সুচিত্রা সেনের ছবি দেখে সোনা কাকীমা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, " এই মাইয়াটা আমাগো বাড়িতে আইছিলো না ?" (বড়দের মুখে শোনা গল্প ও কিছু গবেষনার আধারে লেখা, নিবন্ধে ভুল থাকা অবিচিত্র না) শ্যামলাসুন্দরীকে উৎসর্গ করে ======================== ১৮২৯-এ পাস হলো সতীদাহ বিরোধী কানুন, ওই বছরেই পাস হলো বালবিবাহ বিরোধী কানুন, (১৪ ও ১৮, যথাক্রমে মেয়ে ও ছেলের বিবাহযোগ্য বয়েস নির্ধারিত হলো), এগিয়ে ১৮৫৬-এ পাস হলো বিধবা পুনর্বিবাহ। শ্যামলাসুন্দরীর জন্ম আনুমানিক ১৮৯৫-১৯০০ সালের মধ্যে, ওপরের কোনো কানুনই তার জীবনস্রোত অন্য ধারায় নেয়নি। যখন তার পিতা, এক সদাচারী কুলীন ব্রাহ্মণ, যুগের ধারায় শ্যামলাসুন্দরীর বিবাহ দেন, তখন সে সদ্য কিশোরী, পাত্রও শেষ কৈশোরে। বিধাতার আশীর্বাদ ছিলনা সেই বিবাহে,শ্বশুরবাড়ি যাবার সময় আসার আগেই পাত্রের অকালমৃত্যু হয়, শ্যামলাসুন্দরী যৌবনের আগেই বৈধব্যকে মেনে নেয়। যদিও পিতা বিপিনবিহারী নিজে দ্বিতীয়বার দার-পরিক্রম করেন প্রথম স্ত্রীর দেহান্তের পর, মেয়ে শ্যামলাসুন্দরীর ক্ষেত্রে কিন্তু সামাজিক অনুশাসন মেনে তার পুনর্বিবাহের উদ্যোগ নেননি। শ্যামলাসুন্দরী রঙিন কাপড় পরিত্যাগ করে সাদা-কালো শাড়ীতে নিজেকে ঢাকলো, মাথার চুলের দৈর্ঘ্য কোমর ছেড়ে ঘাড় ছুঁলো, রঙিন চুড়ি মাটিতে আছড়ে ভেঙে, সব আভূষণ সে ত্যাগ করলো। শ্যামলাসুন্দরীর বাকি জীবন তার ঘরের চৌহুদ্দির মধ্যে কেটেছিল -- একটা চারপাই, ঠাকুরের সিংহাসন ও পূজার সামগ্রী, ঘরের কোনায় একটা আলনা। সে স্নান করতো না,কিন্তু প্রতি সকালে সে গায়ে-মাথায় তেল মেখে একটা ভিজে গামছা দিয়ে সযত্নে সর্বাঙ্গ পুঁছতো, শেষে হাতে গলায় চোখের পাতায় কপালে চন্দনের প্রলেপ দিতো -- তার ঘরে ঢুকলেই একটা স্বর্গীয় পরিবেশ অনুভব করা যেত -- চন্দন ফুল শসা-কমলার গন্ধ মিশে যেত মহাভৃঙ্গরাজের গন্ধের সাথে। পিতলের বালগোপাল ছিল তার সারাক্ষনের সঙ্গী, তার স্নান পূজা খাওয়া শোয়াতেই সে সময় কাটাতো। জানি না শ্যামলাসুন্দরী ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখতো কি না, কিম্বা অবসরে ফিরে যেত কিনা তার শৈশবের দিনগুলিতে -- সে এমন অতীত যাকে ফিরে পাওয়া যাবে না, আর আছে এই বর্তমান যার শেষের ঠিকানা নেই। শ্যামলাসুন্দরী আমার পিসীমা ছিলেন। অনেক বর্ণহীন বসন্ত পেরিয়ে, প্রায় ৭০ বছর বয়েসে ইহলোক ত্যাগ করেন, বিনা কোনো অভিযোগ অনুযোগ। পূরবী'বৌদির জন্য =============== মা আমাকে "খোকা" বলে ডাকতেন, যা শুনে বাবা কৌতুকভরে বলতেন, "আহা,বুইড়া পোলা, তার নাম খোকা"। পিতৃপক্ষের স্বজনদের মধ্যে কেবলমাত্র উনিই আমাকে "খোকা" বলে ডাকতেন, পূরবী বৌদিকে মনে রাখার এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমার সোনা'কাকার দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠপুত্র দিলীপকুমার (ওর্ফে "দিলু'দা), তার সহধর্মিনী ছিলেন পূরবী। দাদা ঠান্ডা মাথার লোক, মুখে হাসি লেগে থাকতো কঠিন তর্কের মধ্যেও, ছিলেন রসিক ও উদার মানসিকতার লোক। পূরবীবৌদি অন্য বৌদিদের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিলেন, মিল একটাই ছিল -- সব বৌদিরাই ছিলেন সুশীলা, নম্র, স্নেহময়ী। উনি পশ্চিম-বঙ্গীয় পরিবারের মেয়ে, সম্ভবতঃ আমাদের "বাঙাল" পরিবারে প্রথম "ঘটি" অনুপ্রবেশকারী ছিলেন -- তারটা ওখানেই কিছুটা বেসুরে বাঁধা হয়েছিল। আমি তখন সম্ভবতঃ মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরিয়েছি। উজ্জ্বল গায়ের রং, দীর্ঘ কুন্তলা, দীর্ঘাঙ্গী বৌদি কলেজের সফল সাঁতারু ছিলেন, সময়ের হিসেবে চলাফেরা কথাবার্তায় সপ্রতিভ ছিলেন। আমার ওনাকে সমীহ করার একটা অতিরিক্ত কারণ ছিল -- ওনার দাদা পুলিশ সার্জেন্ট ছিলেন, সাদাশার্ট প্যান্ট, কোমরে চওড়া বেল্টে পিস্তল গোঁজা, মাথায় কালো ক্যাপ পরে লাল মোটর সাইকেল চালিয়ে ডিউটিতে যেতেন। বৌভাতের দিন তত্ব আসলো বৌয়ের বাড়ি থেকে, বিশাল রুই মাছ দেখে বৌদি আনন্দের উত্তেজনায় আবদার করে বসলেন নিজের হাতে মাছটি কাটার। ঘেরা বারান্দায় তার সেই হাঁটুর ওপর কাপড় গুটিয়ে বঁটিতে মাছ কাটার দৃশ্য দেখে হটাৎ হাজির শাশুড়ির চোখ কপালে, আর্তনাদ করে বললেন, "নতুন বৌ এইটা কি করতেসে !!" -- আমার মা'র মধ্যস্থতায় অবস্থা শান্ত হয় কিন্তু ততক্ষনে দ্বিজাতি-তত্ব শিকড় গেড়ে নিয়েছে। দিলু'দার কর্মক্ষেত্র ছিল রাউরকেল্লা, স্টিল প্লান্টের লোকোমোটিভ বিভাগের দ্বায়িত্বে ছিলেন। সেখানেই একবার তাদের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম, প্রায় এক মাস ছিলাম রাউরকেল্লায়। সকালে দুই ছোট মেয়ে স্কুল চলে যেত, দাদাও হয়তো দিনের ডিউটিতে গেছেন -- ঘরের কাজের শেষে সারা দুপুর বৌদির সাথে গল্প আড্ডা গান ঠাট্টায় অলস সময় কেটে যেতো। বিকেল না আসতেই স্কুল ফেরত দুই কন্যার সাথে বৌদির রুটিন কথোপকথন -- "টিফিন সবটা খেয়েছো? জুতো এত ময়লা কেন? শার্ট এ কালির দাগ কেমন করে লাগলো ? ম্যাডাম নোটবুক চেক করেছিল ?” চাকরি জীবনে ভিনদেশে চলে যাবার পর আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়া হতো না, বৌদির সাথেই বেশি কথা হতো টেলিফোনে। কর্মাবসনে দাদা কলকাতায় ফেরত যান, আমি কলকাতায় ছুটিতে গেলে তাদের সাথে অবশ্যই দেখা করতাম, বৌদির হাতের রান্না খেতাম। বৌদির কপট ধমকি, পূর্ববঙ্গীয় ঢঙে কথা বলে আমোদ দেবার চেষ্টা, জীবনের সুখ-দুঃখের কথা শুনতে শুনতে তিন-চার ঘণ্টা অপলকে কেটে যেত। অনেকদিন কথাবার্তা নেই, হটাৎ এক সকালে বৌদির টেলিফোন -- "জানো খোকা, হটাৎ লোকটা কাল সকালে চলে গেলো"। শুনে মন খারাপ হবারই কথা, কেননা মেয়েদের তখন বিয়ে হয়ে গেছে, তাকে এখন একাই থাকতে হবে। সেই সময় বেশিরভাগ টেলিফোনের আলোচনা ব্যাঙ্ক-পোস্টঅফিস, আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়েই হতো, সম্পর্কে বৈষয়িক আলোচনা প্রাধান্য পেতে শুরু করলো। আরও সামান্য কয়েকটা বছর পেরোতেই একদিন আমার টেলিফোনের উত্তর দিলো বৌদির বড়ো মেয়ে, " মা তো মারা গেছেন কিছুদিন আগে"। এই লেখার একটা কারণ আছে. বহুদিন ধরেই সড়কপথে আহমেদাবাদ থেকে কলকাতা যাবার ইচ্ছে আছে, বয়েস বাড়ার সাথে সাথে ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়েছে, আপাততঃ তুঙ্গে আছে -- সামনের মে মাসের যাত্রা এখন পাকা। ম্যাপ খুলে সম্পূর্ণ যাত্রাপথ নির্ধারণ করতে বসে একটা বিকল্পে আসলো "রাউরকেল্লা"। সাথে সাথে ফ্লাশব্যাকে মনে পড়ে গেলো সেই দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে যাবার সড়ক, দাদার কোয়ার্টারের অদূরের সেই পাথুরে ঢিপি, সেই অবকাশের দুপুর আর বৌদির স্নেহময় মুখের হাসি। ছোট কাকীমা =========== শেষ পঞ্চাশের টালীগঞ্জ। শীতের দুপুরে টালির চালে পড়েছে সেই বিশাল পেয়ারা গাছের ছায়া, পেছনের গল্ফ ক্লাবের সীমানায় ঝোপে ঢাকা নালা থেকে ডানা ঝাপ্টে পালালো এক ডাহুক, নারকেল গাছের ডালে বসে চোখ বুজে রোদ পোহাছে ভুষুন্ডি কাক। কঞ্চির বেড়ার ওপাশে পাশের বাড়ির উঠানে হুটোপুটি করছে কয়েকটি বাচ্চা। সাইকেলে চড়ে খেলনা বিক্রি করার হাঁক দিয়ে চলে গেলো একজন। এহেন কোনো এক অলস দুপুরে দরজার সামনের একফালি বারান্দায় চেয়ারে বসে এক পরিপাটি মহিলা পড়ছেন শরৎচন্দ্রের কোনো উপন্যাস -- ধবধবে সাদা শাড়ি কালো মোটাপাড়ের, চোখে কালো ফ্রামের চশমা, বাতাসে শুকানোর জন্য মাথার চুল খোলা, মুখে পান -- চারপাশের কোনো কিছুই তার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারছে না। ইনি হলেন আমার ছোট কাকীমা, আমার আর এক কৈশোরের স্মৃতি। কাকীমা কানে শুনতে পেতেন না, কাকার মৃত্যুও অনেক রোগভোগের পর হয়েছিল, দেশভাগের অনিশ্চিয়তার ওপর নিয়মিত রোজগারের অভাব, সব মিলিয়ে, অনুমান করতে পারি, কাকীমা খুব আর্থিক অনটনে ছিলেন। কিন্তু তার মুখের হাসি ও রসিকতাবোধ বাকি সব অপারগতাকে ছাপিয়ে উঠতো যখন সে কথা বলতো। সেই টালীগঞ্জের ছবি এখন সময়ের ক্যানভাসে বিলকুল আলাদা। পেয়ারা গাছটি অনেক আগেই গেছে, টালীর চালের জায়গায় নিয়েছে আধুনিক পাকা বাড়ি, ডাহুক পলাতকা,প্লাস্টিকের খেলনাওয়ালাও আর আসে না। তবুও, উত্তরজীবনে যতবার গেছি ওই বাড়িতে, অনেক ছবির মতো সেই এলোকেশী ছোট কাকিমা ছবি খুঁজে বেড়িয়েছি -- মুখে পান নিয়ে চেয়ারে বসা,সাদা শাড়ী কালো পাড়, হাতে শরৎচন্দ্র।