Sunday, February 19, 2017

শ্রদ্ধাঞ্জলি - - বনশ্রী সেনগুপ্ত

শ্রদ্ধাঞ্জলি - - বনশ্রী সেনগুপ্ত


দৌড়ের সায়াহ্নে স্বর্ণযুগের গানের পতাকা বহনের দায়িত্ব যাদের ওপর এসেছিলো, সেই শিল্পীদের মধ্যে আপনি ছিলেন একজন। আপনার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল যখন আমি শ্রী মৃনাল চক্রবর্তীর ব্যাপারে আমার ব্লগ লিখছিলাম।"বাবার কাছেই শুরুতে গান শিখি। পরে যে উনি আমাকে হুগলী থেকে কলকাতায় দাদার কাছে পাঠিয়ে দেন, তার কারণ গান ছিল না -- বিয়ের পাত্র খুঁজতে সুবিধা হবে, সেই ভেবেই কলকাতায় পাঠানো।" খুশি আপনার গলায় ঝরছিল যখন আপনার পতিদেবতার ব্যাপারে বলছিলেন।"পুলিশে চাকরি করতেন, আমাকে খুব ভালোবাসতেন, আমার গানের ব্যাপারে সব প্রয়োজন মেটাতেন, বলামাত্রই গানের রেকর্ড, ক্যাসেট, বই, পত্রিকা কিনে আনতেন, ঘর আমার সেই সবে ভর্তি। এখন দেখার অভাবে পাহাড় হয়ে জমে রয়েছে, আপনি চাইলে নিতে যেতে পারেন সামলে রাখার জন্য।"


প্রসঙ্গটা ছিল মৃনালবাবুর লেখা ও সুর দেওয়া আপনার কয়েকটি গান। উচ্ছসিত প্রশংসা করেছিলেন আপনি মৃনালবাবুর, পেশাদারি সংগীত জীবনের শুরুতে উনিই আপনাকে পথ দেখান।"সন্ধ্যা মুখার্জী আমার প্রিয় শিল্পী ছিলেন, শুরুতে আমি অনেকটা ওনার মতোই গাইবার চেষ্টা করতাম


দক্ষিন কলকাতার বকুলবাগান, ১৯৬৬, এক পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। "তখনও আমার কোনো বিশেষ পরিচিতি হয়নি শিল্পী হিসেবে। আমার কর্তা উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করলেন আমাকে একটু গান গাইবার সুযোগ দেবার জন্য। গেয়েছিলাম "মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা"। ওই পাড়াতেই থাকতেন মৃনাল'দা, মাইকে আমার গান শুনেছিলেন।ভালো লাগার জন্য পরদিন পাড়ার ছেলেদের দিয়ে আমাকে ডাকিয়ে পাঠালেন ওনার  বাড়িতে। প্রশংসা তো করলেনই, বললেন আরও পরিশ্রম করতে হবে শিল্পীর স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।আমাকে বললেন শ্রী সুধীন দাশগুপ্তর কাছে আরও তালিম নেবার জন্য, উনি নিজেই সেই ব্যাপারে কথা বললেন সুধীন'দার সাথে। গেলাম সুধীন'দার কাছে, দুই লাইন আমার গান শুনে বললেন, নিজের মতো করে গান না গাইলে (মানে সন্ধ্যা মুখার্জীর অনুকরণ ত্যাগ না  করলে) উনি আমাকে গান শেখাবেন না।ঘরে ফিরে আবার রেয়াজ শুরু করলাম ওনার কথামত, কিছুদিন পরে আবার যখন উনি শুনলেন আমার গায়কী, তখন খুশি হলেন।" সেই  ছিল আপনার পেশাদারী গানের হাতেখড়ি।তারপর থেকেই প্রশংসার পথে হেঁটে গেছেন।



আজ সকালে একজন টেলিফোন করে জানালো আপনার তিরোধানের কথা – খুব খুব দুঃখ পেলামঈশ্বর আপনাকে আদরে রাখুন, প্রার্থনা রইলো। আপনার মোবাইলে নম্বরটা স্মৃতি হয়ে রইলো আমার কাছে, যদিও জানি আপনার সেই মধুর কণ্ঠ এই নম্বর'এ আর বাজবে না।

Saturday, February 4, 2017

টেলিফোনে "গীতশ্রী"দির সাথে কিছুক্ষন


টেলিফোনে "গীতশ্রী"দির সাথে কিছুক্ষন


অনুমান করতে পারলাম যে খুব নিয়মের মধ্যে থাকেন, পূজাপাঠ ওনার নিত্যকর্মের অঙ্গ, এই ৮৫ বছর বয়েসেও কথায় সপ্রতিভ, অতি নিম্নস্বরে কথা বলেন, এত মিষ্টি লাগে শুনতে যে বোঝাই যায় না গান গাইছেন না কথা বলছেন।এই 'লো আমাদের "গীতশ্রী" সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ডিসেম্বর ২০১৬-এর প্রথম সপ্তাহের কথা  -- - বারের চেষ্টার পর ওনার কাছে টেলিফোনে পৌঁছানোর পর প্রথমেই খেদ প্রকাশ করলেন প্রতীক্ষা করানোর জন্য। আমার জিজ্ঞাস্য ছিল ছোট্ট একটি কথা -- "স্বপ্নভরা রাতের আকাশ রয় জেগে" গানটি কোন ছায়াছবিতে গেয়েছিলেন (অসম্পূর্ণ কিছু তথ্য থাকায় এই জিজ্ঞাসা)  টেলিফোন লাইন বেয়াদপী করছিলো, তাই গানের প্রথম লাইনটার সুর করতেই বলে দিলেন সেই ছায়াছবির নাম।


কিন্তু ওই ছবিতে তো গীতা দত্তর গান ছিল”, আমি একথা বলায় বললেন -- "হসপিটাল" না, এটা "হাসপাতাল" ছবির গান ছিল (পরে অনুসন্ধানে জানতে পারি, দুটোই প্রায় সমসাময়িক ছায়াছবি, কিন্তু "হাসপাতাল" অসম্পূর্ণই থেকে যায়, মুক্তি পায়নি)


কথায় কথায় বললেন পুরানো দিনের সংগীত পরিচালকদের কথা (হাঁ, প্রত্যাশিতভাবে, রবীন চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম শুরুর ৫-৬'টা নামের মধ্যেই ছিল)  যেই সুরে সুরে বললাম যে ওনার সেরা গানগুলির মধ্যে আমার বড়ো পছন্দের হলো "এই রাত ওই চাঁদ", জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি গান শিখেছো"? উত্তরে  "না" শুনে বললেন, "আচ্ছা, গানে তোমার প্যাশন আছে, ভালো" মনে করিয়ে দিলাম ১৯৬০- দশকে ওনার খোলা মঞ্চে গানের কথা (অতি সাধারন বেশভূষা), অনুযোগে  জানিয়েও দিলাম উনি সব সময় দেরি করে আসতেন বলেই আমাদের বাড়ি ফেরার শেষ বাস চলে যেত আর আমরা অনুষ্টান শেষে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম (আসল ব্যাপার ছিল এই যে ওনাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা সবার শেষে গাইবার জন্য রাখতেন, এমনই মনমাতানো গায়িকা ছিলেন)


আকাশবানীতেও অনেক গান গেয়েছি, সম্প্রতি ওরা আমার গানের একটা CD বের করেছে কথায় কথায় বললাম মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সাথে আকাশবাণীতে গাওয়া (১৯৬২?) সেই অতিপ্রশংসিত গান "জনশক্তির প্রাণবন্যায় নবযৌবন ওরে জাগলো” (কথা: শ্যামল গুপ্ত, সুর: জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ) – বললেন, "হাঁ, সেটা "দেশবন্দনা" গান ছিল"


এক প্রসঙ্গে ২-৩ জন মহিলা শিল্পীর নাম করলেন যারা উঁচু স্কেলে গাইতে পারতেন।আমেদাবাদে থাকি শুনে বললেন, "আমি আমেদাবাদে একবার গিয়েছিলাম"।বললেন, "সংগীত একাডেমী"র দায়িত্বভার আবার নেবার জন্য অনুরোধ এসেছে"।



প্রায় ২৫ মিনিটের সেই বার্তালাপ আমার বাকি জীবনে কানে গুনগুন করবে।



*****   এই লেখা থেকে যদি কেউ তথ্য নিয়ে অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করেন, আশা করব স্বীকৃতি প্রদান করবেন।