Sunday, June 9, 2019

বরানগর বাজার (১৯৬০/৬৫ 'র গল্প)

বরানগর বাজার .... (১)

কাকডাকা ভোরে বরানগর যখন আলমোড়া ভেঙে শেষ ঘুমটাও চোখে নিংড়ে নিচ্ছে, রাস্তা যানবাহনহীন, সব আলোও নেভেনি, তখন বরানগর বাজারের মুখে ব্যাপারীদের প্রাত্যহিক কর্মব্যস্ততা। মাটিতে বসে খবরের কাগজের হকাররা কাগজের বান্ডিল বানিয়ে সাইকেলে বাঁধছে বিলি করতে যাবে বলে, ট্রাক/ ভ্যান/রিকশা থেকে নামানো হচ্ছে বাজারের শাকসব্জী মাছ, এরই মাঝে ম্যুনিসিপালিটির সাফাই কর্মচারী মোটা ঝাঁটা নিয়ে জঞ্জাল পরিষ্কারে ব্যস্ত। নানান বাহারী ফল সবজীর লাল-সবুজের খেলা চলছে বাজারের ঢোকার মুখে। সামনের জমিতে জল ছিটিয়ে ফুলের দোকানের ব্যাপারী মাটিতে চট পেতে সাজাচ্ছে ফুল বেলপাতা তুলসীপাতার পশরা, তার বৌ বানাচ্ছে মালা, লাল জবা আর গাঁধা ফুল দিয়ে। উনুনের নিচে সমানে হাত পাখা নেড়ে চলেছে চায়ের দোকানের লোক, ঘুঁটে-কয়লার ধুঁয়ায় বাতাস ভারী হয়েছে -- দু'একজন ইতিমধ্যেই তাগাদা দিয়ে গেছে চায়ের জন্য। আওয়াজ করে ঠিক মোড়ের মাথার স্টেশনারী দোকানের ঝাঁপ খুললো আর প্রায় সেই সাথেই ভ্যানে আসলো মাখন পাঁউরুটির ডেলিভারী, মন্দিরের ঘন্টা বাজিয়ে শুরু হলো প্ৰাতঃপ্রণাম। মিষ্টির দোকানের বাইরে টুলে বসে সদ্য নামানো সিদ্ধ আলুর গরম খোসা ছাড়াচ্ছে এক কর্মচারী, নিচে পরে এক রাস কড়াইশুঁটির খোসা -- সিঙ্গারা বানানোর প্রস্তুতি চলছে। দোকান সাজাতে গিয়ে ডিমের দোকানীর হাত থেকে মাটিতে ভেঙে পড়লো ২-৩'টা ডিম, রাস্তার কুকুর সেটা চাটতে আসতেই তার টায়ারের চপ্পল দিয়ে তার ওপর সব রাগ উজাড় করলো দোকানী, বাজারের চালের ওপর থেকে সে দৃশ্য দেখলো লেজ গুটিয়ে বসে থাকা লাল-সাদা মিনি। বগলে আজকের খবরের কাগজ গুঁজে ষ্টেশনারী দোকানে আসলো এক খদ্দের -- ঠান্ডা মাটির জলের পাত্রে রাখা মাখনের ১৫০/২০০ গ্রামের ছোট ছোট প্যাকেট, আঙ্গুল ডুবিয়ে ২টা মাখনের প্যাকেট নিল, নাকে পাঁউরুটির ঘ্রান নিয়ে তাজা ভাব পরীক্ষা করে এক প্যাকেট পাঁউরুটি কিনে পয়সা দিয়ে চলে গেলো। মাটির ভাঁড়ে চা আর তার সাথে S-বিস্কুট খেয়ে কাগজের হকাররা যে যার রুটে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। রিকসায় আসলো ছোট মাছ, বড় বড় ড্রামে জল নাড়িয়ে মাছ তাজা রাখছে ব্যাপারী, এক এক করে নিয়ে যাওয়া হবে মেছুয়াদের লাইনে। দিনের আলো তেজ হবার আগেই বরানগর বাজার তৈরী খদ্দেরদের অভ্যর্থনার জন্য -- সারাদিন চলবে দর কষাকষি, লাভ-লোকসানের লড়াই। চৌমাথার ভাড়া বাড়িতে থাকা কাবুলিওয়ালারা কাঁধে ঝোলাভর্তি আখরোট পেস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো তাদের জীবিকার সন্ধানে। আর তখনি নরেন্দ্রনাথের পড়ুয়ারা অলিগলি থেকে বেরিয়ে পড়লো সকালের কোচিং ক্লাস করতে।

বরানগর বাজার .... (২)

বেলা আটটা। গড়িয়ে গড়িয়ে বনহুগলী থেকে এসে পৌঁছলো ৩২ নম্বর বাস, সামান্য কয়েকজন যাত্রী। কোনো জলদিবাজী নেই -- অল্পক্ষণের জন্য বাস থামিয়ে ড্রাইভার মা কালীর ফটোর সামনে একটা ধুপকাঠি জ্বালিয়ে পেন্নাম করলো। হাতের টিকেটের বান্ডিলে আঙ্গুল ঘষে কন্ডাক্টর একটা বিচিত্র আওয়াজ করে হাঁক মারলো, যদি ওঠার জন্য কোনো যাত্রী থাকে। তখনো সময় হয়নি যাত্রী আসার, অগত্যা বাস কালো পাথরের ইঁটে সাজানো কাশীপুরের রাস্তায় এগিয়ে গেলো, অসমতল সেই রাস্তায় দরজা জানালার ঝাঁকানিতে খোল কীর্তনের আওয়াজ তুলে। ড্রাইভার মাঝে মাঝে আরশিতে দেখে নিচ্ছে পেছনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ৪ নম্বর বাস আছে কি না।
লুঙ্গি পাজামা পরে লোকেরা আসছে বাজার করতে। হাতে আনাজ আমিষ ও বিবিধ উপকরণের জন্য ২-৩ টা ছোট বড় ব্যাগ, অনেকদিন না ধোয়ার জন্য তাদের আসল রং বোঝা যাবে না। সময় কম, তাড়াতাড়ি বাজার ফেরত হলেই গিন্নীরা ভাত-ডাল-মাছের ঝোলের সংক্ষিপ্ত ব্যঞ্জন বানিয়ে দিতে পারবে, কোনো মতে মুখে দুটি গুঁজেই কর্তারা দৌড়োবে অফিসমুখো, হয় বি.টি.রোড বা বরানগর বাজার থেকে বাস ধরে, তার পেছনে কিছু পরেই বেরোবে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।
বাজারের বাঁ দিকের গলির মুখের মিষ্টির দোকানে গরম সিঙ্গারা-নিমকির বিক্রী হচ্ছে, মালিক ঘাড়ের গামছা দিয়ে বেলের মোরোব্বার ওপর থেকে মাছি তাড়াচ্ছেন, কর্মচারীকে তাগাদা দিচ্ছেন তাড়াতাড়ি লেনদেন করার জন্য। সেটা পেরোলেই ছোট দোকানে ঠাসা মুড়ি গুড় বাতাসা নলেনগুড়ের মোয়া ইত্যাদির সামগ্রী। পাশেই দাঁড়িয়ে একজন বিক্রি করছে ধূপকাঠি, একটা নমুনা জ্বালিয়ে, খুব সুগন্ধী। কিন্তু এই তাড়াহুড়োর সকালে তাদের ওপর নজর নেই বাবুদের। এখান থেকে শুরু কাঁচা বাজারের -- মাটিতে চট কাপড় বিছিয়ে একের পর এক ছোট ছোট ব্যাপারীরা নিয়ে বসে আছে নানান সবুজ শাক -- কুমড়া পালং নটে মেথী পুইঁ পলতা, আছে কুমড়া ঢ্যাঁড়স পটল লাউ উচ্ছে বেগুন পটল। কোলে ছোট বাচ্চা নিয়ে এক বৌ বসেছে কাগজীলেবু শশা তালশাঁস পেয়ারা নিয়ে, তার পাশেই এক বুড়ীমা বসেছে মোচা আর কিছু কামরাঙ্গা নিয়ে। বাজারের ভিতরে আছে আলু পেঁয়াজ মাছ মাংসের দোকান, আছে মশলা ও চাল ডাল তেলের দোকান। এর মধ্যেই লোকের গা এড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেটলী হাতে চায়ের দোকানের ছেলেটা, তার অন্য হাতে কয়েকটা মাটির ভাঁড়। ওখান থেকে বেরিয়ে আসলেই আবার বড় রাস্তা -- ডিম ফুল বেলপাতা ওখানে পাবেন।
বাবুরা তাড়াহুড়ায় বেশি দরদাম করতে পারছে না, বড় জোর পাল্লায় একটা বেশি আলু বা পেঁয়াজ, কোথাও আকারে বড় কিছূ নিয়ে জেতার ভাব করছে।
রাস্তার ওপারে রিকশা থেকে কেতাদুরস্ত সাদা পাজামা পাঞ্জাবী, পায়ে রাধুর শৌখিন চপ্পল পরে নামলেন হিরন্ময় বাবু -- বহুদিন বিদেশে থেকে শেষ জীবনে দেশে ফিরেছেন বছর দুই আগে। আজ ড্রাইভার আসেনি, তাই রিকশা। টুংটাং আওয়াজ তুলে লাইটার দিয়ে জ্বালালেন ক্যাপস্টান সিগারেট, রিকশাঅলাকে অপেক্ষা করতে বললেন। বাজারের গলিতে এক পা রেখেই জল কাদা দেখে পিছিয়ে গেলেন -- ইশারাতে বাঁধা মাংসের দোকানীকে ডাকতেই সে দৌড়ে এলো -- "২ সের পাঁঠার মাংস আর একটা মাঝারী ওজনের দেশী মুরগীর মাংস বাড়ীতে বৌদিকে দিয়ে আসিস, বেশি দেরী করিস না"। দামী চামড়ার পার্স থেকে কিছু টাকা বের করে তার হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন, "বাকি টাকাটা তোর কাছেই জমা রেখে দিস", বলেই রিকশায় চড়ে ফেরত গেলেন।
রতনবাবু রোডের অনুপমবাবুর বাড়ীতে বাজার করা নিয়ে নিত্যি অশান্তি, প্রায় রোজই খারাপ মেজাজেই বাড়ী থেকে অফিসে যায়, গিন্নী বলে, "কি রোজ রোজ ওই এক ঘেয়ে থানকুনী-কাঁচাকলা আর চারা পোনা আনো, বাড়িতে সবারই কি পেটের ব্যামো আছে?" অনুপমও দমবার পাত্র নয়, জবাব তৈরী "শশুর বাড়ীতেই বা আমার পাতে কোন গলদা চিংড়ি আর পাকা রুইয়ের পেটী পড়ে ?" আজ বেচারা অনুপম ঠিক করেছে পনীর কিনবে, বৌ সত্যি খুব ভালো বানায় পনীর, ঘি গরম মশলা দিয়ে।
সচ্চাসী পাড়ার ধীলনবাবু রোজের মতো আজও ব্যাজার মুখে হাঁটু পর্যন্ত ঝুলে থাকা ২-৩টা বড় থলী নিয়ে বাজারে ঢুকলেন। তিন চাকুরে ভাইয়ের যৌথ পরিবারের বড় ছেলে উনি, বাবা মা তিন ভাইয়ের বৌ বাচ্চা ও কাজের লোক মিলিয়ে প্রায় জনা পনেরোর পরিবার, তিন ভাইই চাকুরে, আর্থিক অবস্থা বেশ ভালোই। এহেন ধীলনবাবুর পীড়া অন্যত্র -- ঠিক বাজারের সময় হলেই ভাইয়েরা বাথরুমে ঢুকে পড়বে, কাপড় ইস্ত্রি করবে বা অন্য কোনো অছিলায় পাড়ার দোকানে "এই আসছি" বলে বেপাত্তা হবে, ফলে বাজারের ঝামেলা এই ধীলনের ঘাড়েই পড়ে -- রোজ আলু পেঁজায় ২-৩টা বড় কফি মাছ -- এই সব দুই হাতে মুটের টেনে টেনে তাকেই আনতে হয়। তবে বাজারে ওনার হিতৈষী অনেক, "এই আড় মাছের পীসটা বাবু আপনার জন্য, ওটার দাম দিতে হবে না", মাছের দোকানী ওনার ব্যাগে আলাদা করে একটা ছোট মাছের ঢুকিয়ে দিয়ে বললো।
নবীন ডাক্তার মনোজিৎ, খুব স্বাস্থ্য সচেতন -- লাল মাংস ? নৈব নৈব চ -- মাছের কানকো উঠিয়ে দর্শনে সন্তুষ্ট হলেই সে মাছ কিনবে, সবুজ সব্জী গাজর-বীটের স্যালাড অনিবার্যভাবে খাবার টেবিলে চাই -- বাজার ঘুরে ঘুরে সে কলেজের নিউট্রিশনের চ্যাপ্টারে উল্লেখ করা কাঁচা ফলসব্জীর যা কিছু এই বাজারে পাওয়া যায় সে সব অল্প অল্প করে কিনলো।
প্রভাকর সদ্য পাশ করে চাকরীতে ঢুকেছে, তাই তারাতাড়ি বাজারে আসে যাতে অফিস যেতে একটুও দেরী না হয় -- মা নাকি ওর বিয়ের পাত্রী দেখেছে কিন্তু লজ্জায় এই ব্যাপারে মা'কে কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেনি, সর্বক্ষণ কৌতূহল মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজার শেষে হাতের ঘড়িতে দেখলো এখনো সময় আছে, মন্দিরের পাশে তেলেভাজার দোকানে বেগুনীতে এক কামড় দিতেই মনে পড়লো আজ বৃহস্পতিবার, লক্ষ্মীপূজার দিন -- বিয়ের ভাবনা ছেড়ে দৌড়োলো আবার সেই শেষের গলিতে পূজার ফুল বেলপাতা আমের পল্লব আর মিষ্টির দোকান থেকে গুজিয়া কিনতে।
শুভ্রকান্তিকে ওজনে বা দামে ঠকাবে, বাজারে এমন দোকানী হাতে গোনা যায়। কর্মসূত্রে তাকে প্রায়ই দিল্লি বোম্বাই করতে হয়, দুনিয়া দেখা লোক সে, তার নজরে কোথাও খুঁত ধরা পড়লে সে তৎক্ষণাৎ ফেরত দেবে -- কানা বেগুন, বুড়ো কাঁচকলা, পোস্তোয় পোকা --কিছুই তার নজর এড়াতে পারে না। মাছের দোকানে ওজন করার আগে পাল্লা উল্টে দেখেন চুম্বক লাগানো আছে কি না, এমনই কঠিন খদ্দের উনি। মাছওয়ালাও তেমনি, দূর থেকে ওনাকে আসতে দেখলেই চালানের রুই মাছের পেটীর ওপর টাটকা মাছের রক্ত মাখিয়ে সেটা শুভ্রকান্তিকেই গছিয়ে দেয় -- "খুব ভালো মাছ, খেয়ে দাম দেবেন বাবু "।
এই ভাবেই তাড়াহুড়ায় শেষ হলো অফিসবাবুদের সকালের বাজার -- বাজারের থলে রান্নাঘরের দুয়ারে ফেলেই দৌড়াবে স্নান করতে, হাপুস হুপুস আওয়াজ তুলে গরম ডাল ভাত তরকারী মাছের ঝোল কোনমতে মতে খেয়েই দৌড়োবে বাস ধরতে, আর দিনের শেষে নেতিয়ে পড়া নটে শাকের মতো ঘর্মক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরবে, দিনযাপনের গ্লানিতে আকণ্ঠ ভরিয়ে।

৩০-এ বাসের গল্প (১৯৬০/৬৫)

৩০-এ বাসের গল্প

পঞ্চাশের দ্বিতীয়ার্ধে সিঁথির নগরজীবনে অনেক পরিবর্তন আসলো, একের পর এক। সরলো রাস্তার গ্যাস লাইট, লাগলো ইলেক্ট্রিকের স্তম্ভ, সিঁথি মোড় থেকে পুরানো কালীতলা পর্যন্ত নতুন করে পীচ দিয়ে বাঁধানো হলো রাস্তা, আর তার পিছনেই আসলো ৩০/এ সরকারী বাস -- বাগবাজারের মুখ থেকে (এখন যেখানে স্টেট ব্যাঙ্কের বিল্ডিং আছে) ছাড়তো সেই বাস, শেষ হতো সিঁথির ওই কালীতলায় (পরে সেই বাস রুট রেল লাইন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল)। এই লেখার বর্ণনা কেবল কালীতলা থেকে সিঁথির মোড় পর্যন্ত সীমিত, প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার কড়চা।
প্রথম সরকারী বাস কালীতলায় থামতেই খুশির হাওয়া স্থানীয়দের মধ্যে -- কালীতলার মোড়ে তখন ছিল একটি ডাক্তারখানা, একটি পান-বিড়ির দোকান, একটি গম ভাঙানোর কল, আর তার গায়ে লাগানো একটি মিষ্টির দোকান। যেন "অনেক চেষ্টা করে এই রুট খোলাতে পেরেছি", এমন একটা ভাব করে নামলেন বাসের কন্ডাক্টর আর ড্রাইভারবাবু, সৌজন্য বিনিময় হলো স্থানীয়দের সাথে। বাস পৌঁছতেই সব ভীড় বাস ঘিরে, বাচ্চারা সেই ভীড়ের মাঝে নজর এড়িয়ে বাসে ঢোকার চেষ্টা করছে আর কন্ডাক্টরের ধমক খাচ্ছে। মেয়ে'বৌয়েরা রাস্তার পাশের কালভার্টের ওপর দাঁড়িয়ে, গোড়ালী উঁচু করে সেই দৃশ্য দেখছে। পরের বছরগুলিতে পালাক্রমে ছোট নাকওয়ালা সরকারী বাস, বেসরকারী বাস, নাকখেঁদা সরকারী বাস ও শেষে আবার বেসরকারী বাস হাজির হয়েছে ওই রুটে।
ওই বাসে আমিও অনেকদিন স্কুলে যাওয়া আসার জন্য চড়েছি, আজও চলে সেই বাস -- পরে হাত/সাইকেল রিকশা এসেছে, ট্যাক্সি এসেছে, এসেছে বেঁটে অটো রিক্সা কিন্তু ৩০-এ তার স্বমর্য্যায় আজও বহাল -- সিঁথিকে কলকাতার সাথে পরিচয় করে দিয়েছিলো ওই ৩০-এ বাস। ৩০/এ সিঁথির বিবর্তনের সাক্ষী, কলকাতার সাথে সিঁথির আত্মীয়তার মূল যোগসূত্র।
যাত্রার শুরুতে কালীতলায় তখন তেমন ভীড় হতো না, অর্ধেক বসার জায়গা খালি পড়ে থাকতো। হয়তো কোনো দুপুরে দেখবেন উঠতি নায়ক দ্বিজু ভাওয়াল ফিটফাট শার্ট-প্যান্ট পরে, চোখে রঙ্গীন চশমা পরেম, পকেটে হাত ঢুকিয়ে, কৃতিম উদাসীনতায় অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য, কিংবা শ্যামবাজার থেকে শেষের লম্বা সিটে বসে আসলেন শ্রী মনোতোষ রায় (বেঁটে কিন্তু সুঠাম পেটানো গড়ন, ঝাঁকড়া মাথার চুল, প্যান্ট-শার্ট ও রঙ্গীন চশমা)।
হয়তো কোনোদিন স্কুলে যাচ্ছি বাসে করে। গলা খাঁকারি দিয়ে কালীতলায় বাস সচল হলো, আর সেই আওয়াজে মুখ তুলে চাইলো রাস্তাঘেঁষা খাটালের ২-৪টি মহিষ। ডান দিকের হরিসভায় তখন বিকেলের কোনো উৎসবের আয়োজন চলছে, সেটা পেরিয়ে বাস থামলো প্রথম ষ্টপেজ ফকির ঘোষ কলোনীতে। সাত-আটজন এখানে আছেন বাস ধরার জন্য -- কেউ সুধাংশুদার ষ্টেশনারী দোকানে, কেউ শান্তি ধৌতলায়ে বা মিষ্টির দোকানে -- আর ওই যে টানটান শরীরের লম্বা মানুষটি, সযত্নে আঁচড়ানো মাথার চুল, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা, ফিটফাট সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, উনি হলেন সুধীন'দা, গননাট্য করেন, গানবাজনার লোক, তেমন আড্ডাবাজ না (ভালো নাম সুধীন দাশগুপ্ত)। সবার সাথে সহপাঠী সুদীপ্তও উঠলো বসে ওখান থেকে, আঁটোসাঁটো হয়ে দুজনে বসলাম এক সাথে।
বাস সামান্য এগোতেই মুরগীর সরু গলার মতো বাঁকা রাস্তা, বাঁ দিকের জানালায় হাত রাখলে বাড়ীর দেয়ালে ঘষা লাগার সম্বাবনা, ডান দিকে দেখুন দোকানে বসে পাঁউরুটি দিয়ে ঘুগনি-আলুরদম খাচ্ছে ২-১ জন, হাতে দৈনিক যুগান্তর বা আনন্দবাজার, বড় বড় করে খেলার পাতায় লেখা নীল হার্ভের ব্যাটিং পরাক্রমের বর্ণনা। সামান্য এগোতেই আসলো আলবার্ট ডেভিড বাস স্টপ। ভীড় বাড়ছে, নবযৌবনা পামেলা সোম শাড়ী সামলাতে সামলাতে উঠলো বাসে, কলেজ যাবার জন্য। ওদিকে ঘাড় গুঁজে "স্বপন কুমার" পড়ছেন জানালার ধারে বসে থাকা এক যাত্রী, কন্ডাকটর তাকে দু'বার টিকেটের তাগাদা দিয়ে ফিরে গেলো।
আলবার্ট ডেভিড বাস স্ট্যান্ডের উল্টো দিকে কাগজ কলের বিশাল পরিসর, বাস থেকেই দেখা যায় ভেতরের বড় ঝীল, মাঠ আর কারখানা। এখানেই হলুদ রঙের ভাড়ার ল্যান্ডমাস্টারে চড়ে এক মান্না দে গান গাইতে আসতো, কোম্পানীর বার্ষিক অনুষ্ঠানে। পরের স্টপেজ বেণী কলোনী পর্যন্ত ডান দিকে ছিল কাগজ কলের পাঁচিল ঘেরা জমি, বাঁ দিকে ছিল কিছু ছোট দোকান আর একতলার কিছু বসতবাটি।
বেণী কলোনী না আসতেই সবাই পায়ের নিচের জমি শক্ত করতো, পা ছড়িয়ে বসতো, কেননা বেশি ভীড় এখানেই হতো। মাছ সবজীর বাজার, চা-তেলেভাজা-খৈ মুড়ি বাতাসা-পান-বিড়ি-খৈনীর সারি সারি দোকান, মাছিতে ভ্যান ভ্যান করছে চারিদিক। বাস থামতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো শক্ত সমর্থরা, খালি কোনো বসার জায়গার প্রত্যাশায়, গজর গজর করে বিরক্তি প্রকাশ করে তাদের পিছনে পিছনে ঢুকলো বয়স্করা, ছাতা হাতে বুড়ো দাদুও ঢুকলেন অনেক ধাক্কাধাক্কি করে। দোকানে সিগারেটের ফেরত খুচরো পয়সা না গুনেই পকেটে ঢুকিয়ে দৌড়ে বাসের দরজার হ্যান্ডেল ধরলো চুলে ঢেউ খেলানো ফ্যাশনের শার্ট পরা কোনো এক সুদর্শন।
বাস এবার দৌড়াবে, কালীবাড়ির আগে কোনো স্টপেজ নেই, বাসের ঝাঁকানিতে যাত্রীদের বসা-দাঁড়ানোর নতুন সমীকরণ হচ্ছে, ঠোঁটে আঙ্গুল ছুইঁয়ে পাতা উল্টিয়ে "স্বপন কুমার" প্রায় শেষের পাতায় এসে ঠেকেছে, সুদর্শন ব্যস্ত পামেলার মুখের জরীপ নিতে, বুড়ো দাদুর ছাতার হ্যান্ডেল বার বার অন্যের পকেটে ঢুকে বিবাদের সৃষ্টি করছে।
বেণী কলোনী - কালীবাড়ির রাস্তা নিচু জমির, বর্ষায় ঢল নামে -- দূর থেকে বাস আসছে দেখেই ডান দিকের সবাই জল ঠেলে এগোচ্ছে কোনো বাড়ির উঁচু বারান্দার দিকে সেই ময়লা জলের ঢেউ থেকে বাঁচতে, বাঁ দিকের পথচারীরা দাঁড়িয়ে আছে রং কলের উঁচু জমিতে -- আর যারা বাগান বাড়ীর আসেপাশে, তারা নিরুপায় হয়ে মেনে নিচ্ছে বাসের সাথে আসা সেই জলস্রোত।
কালীবাড়িতে বাসে ওঠার তেমন কেউ থাকতো না, সামনেই সিঁথির মোড়, সেখানে হেঁটে গেলে আরও অনেক উপায় আছে শ্যামবাজারের দিকে যাওয়ার। সিঁথির মোড় আসলে অনেকের সাথে আমিও নামতাম, তার আগেই আমার হাতে কেউ তার ব্যাগ জমা দিয়ে অগ্রিম আমার জায়গার অধিকার নিয়ে নিয়েছে। বাস চললো এখন BT Road ধরে শ্যামবাজারের দিকে।
এখনো ৩০/এ ছুটে চলে আর পথে, কেবল ড্রাইভার কন্ডাক্টর যাত্রীদের মুখ পাল্টেছে, এখনো কোনো হবু অভিনেতা ওই বাসে চড়ে কর্মস্থলে যায়, কোনো গানেরলোক মনে মনে সুর সাজায়, কোনো পামেলা ওই জানালার পাশে বসে বড় ডিগ্রীর স্বপ্ন দেখে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

৩০-এ বাসের গল্প (একজন বললো, বাসটা শ্যামবাজার পর্যন্ত পৌঁছে দে -- তাই এই অতিরিক্ত সংযোজন)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজারের যাত্রাও আকর্ষণীয় ছিল। বি.টি.রোডে ঢুকতেই ৩০-এ'র চলন পাল্টে যেত, ঢিলেঢালা কচ্ছপের গতি পাল্টে ফেলে বাস হটাৎ তার অশ্বশক্তি ফিরে পেতো। বিরাট সরীসৃপের মতো পড়ে আছে বি.টি.রোড, অগুনতি বাস ট্যাক্সি ট্রাক তার ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে শ্যামবাজারের দিকে, ৩০-এ নেমে পড়লো সেই ছন্দে তাল মেলাতে। সাউথ সিঁথিতে ওঠার যাত্রী হয় ২-১ জন থাকতো, কিন্তু তাড়াহুড়ার সময় তাদের উপেক্ষা করেই বাস থামতো কাঁটাকলে, স্থানীয় কাউন্সিলর গণপতি সুরের বাড়ীর সামনে। তখন ওখানে না ছিল অর্থনীতি বিভাগ, না ছিল আই.আই.এম, না ছিল রাজ্যের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রবীন্দ্রভারতী অনেক পরের কথা -- ছিল অযত্নে পড়ে রবি ঠাকুরের পৈতৃক বাগানবাড়ী "মরকতকুঞ্জ"। সি.আই.টি. আবাসন তৈরী হবার পর ওখানেও একটা স্টপেজ বনেছিল, ছিল আরও একটা স্টপেজ, চিঁড়িয়া মোড় পৌঁছানোর আগে।
ছুটছে ৩০-এ, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে "জয় বাবা লোকনাথ" কিংবা "মায়ের আশীর্বাদ" -- অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও অন্যান্য মানুষে বোঝাই হয়ে, লম্বা হাত বাড়িয়ে আপনার নাক কান ছুঁয়ে কন্ডাকটর টিকেটের পয়সার লেনদেন করছে, জানালার ধারে বসা প্রাচীনা মন্দির দেখলেই চোখ বুজে কপাল হাত ঠেকাচ্ছেন, ভাঁজকরে কাগজ পড়ছেন একজন তো পাশের আরও ২-৩ জন তাতে নজর বোলাবার চেষ্টা করছেন, লেডিস সিটে একজন পুরুষ যাত্রী এক কোনে সিঁট্কে বসে আছেন, প্রতি স্টপেজে ঘাড় হেলিয়ে দেখছেন কোনো মহিলা যাত্রী উঠলো কি না।
চিঁড়িয়া মোড়ের রাস্তার বাঁ দিকে কাশীপুর পুলিশ ফাঁড়ি, থানার কমপাউণ্ডে সাদা হাফ প্যান্ট-হাফ শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কয়েকজন পেট মোটা কনস্টেবল, বারবার কোমরের বেল্ট কসে বাঁধছে -- ডানদিকে সশস্ত্র রক্ষীদের আবাসন, গেটে স্থির দাঁড়িয়ে নেপালী/গুর্খা রক্ষী, দেখতে স্মার্ট, পোশাকেও স্মার্ট। রাস্তার ওপারে, নর্দমা পেরিয়ে, ডানদিকে ছিল "দেশী ও বিলাতী মদের দোকান" -- লোহার দুর্গের মতো ঘেরা সেই দোকানের জাল দেওয়া ছোট জানালার পীছনে বসে থাকতো দোকানদার, বাসে বসেই দেখা যেত। সন্ধ্যেবেলা সেখান থেকে অপরাধীর মতো মুখ করে দু'একজন ফিরতি বাসে চড়তো কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ সামলিয়ে। রাস্তাপারের উল্টা দিকে দোতলার দোকানে "২৪ ঘন্টায় পাসপোর্ট ছবি ডেলিভারি দেওয়া হয়", খাড়াই সিঁড়ি বেয়ে তার পাশেই দাঁতের ডাক্তারের চেম্বার, যেখানে "সযত্নে দাঁত বাঁধানো হয়"।
চিঁড়িয়া মোড়ে যাত্রীর ওঠানামা হতো, যানবাহনের জট থাকায় মোড় পেরোতে সময়ও লাগতো। মাঝখানে স্টপেজ থাকলেও বাস সেই টালা পার্কেই থামতো, ব্রীজের আগে -- যেখানে উল্টোদিকের ছোট ছোট দোকানে রেল ইয়ার্ডের ভিনদেশী শ্রমিকরা দুপুরে পীতলের বাসনে ছাতু মেখে খেত। ব্রীজ চড়তে বাস ঘেমেনেয়ে একাকার, বারবার হাঁচাহাঁচি করে ইঞ্জিনের গলা পরিষ্কার করে তবে শেষ হলো সেই চড়াই-উৎরাই (ষাটের প্রথম দিকে ঘটেছিল এক মহা দুর্ঘটনা এই ব্রীজে -- রাত্রে ১১ নম্বর দোতলা বাস রেলিং ভেঙে পড়েছিল নিচের রেললাইনে, অনেকে মারা গেছিলো -- সেই ব্রীজ পুরোটাই ভেঙে নতুন ব্রীজ বানানো হয়, নির্মাণের সময় অন্যদের সাথে ৩০-এ টালা পার্ক ঘুরে, ভেটেরিনারী কলজে ছুঁয়ে শ্যামবাজার পৌঁছাতো)। আসলো টালা পোস্ট অফিস, উল্টো দিকে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের অফিসের বাইরে বিরাট লাইন চাকুরিপ্রার্থীদের। বাস পেরোলো বেলগাছিয়া ব্রীজ, যার এখানে ওখানে দাদের মলমের ছাপ দেওয়া বিজ্ঞাপন, এক ঘোষবাবু সবাইকে দেয়ালে লিখে জানাচ্ছেন যে "সূর্যই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে" -- আর ওইখানে "জাগো বাঙালী"র নিচে কে যেন তীর্যক লিখেছে "কাঁচা ঘুম ভাঙাইবেন না"। নিচে বেলগাছিয়া ক্যানেল -- এই ক্যানেল দূরে মিশেছে বিদ্যাধরী নদীতে, একসময় বড় নৌকা ও স্টীমার চলতো এই ক্যানালে, অনেক ছোটবেলায় আমি ও উল্টাডাঙ্গা থেকে সেই স্টিমারে দূরের কোনো জায়গায় গেছিলাম এক পারিবারিক দুর্গাপূজা দেখতে। ব্রীজের লাগোয়া মোটা জলের পাইপ থেকে ফোয়ারা দিয়ে জল বেরিয়ে পড়ছে ক্যানালে, ঘুরে ফিরে সেখানে ঠোঁট লাগিয়ে জল খেয়ে যাচ্ছে কাকপক্ষীরা। মোড়ের পুলিশ হাত দেখিয়ে প্রথমে যেতে দিলো ট্রামকে গ্যালিফ স্ট্রিট টার্মিনাসে, যেখানে একসময় পাখি, রঙিন মাছের হাট বসতো ।
ওইতো এসে গেল শ্যামবাজার -- মোড়ের মাথার বাড়িগুলোর ওপর দেখা যাচ্ছে বড় বড় সব হোর্ডিং -- সাধনা ঔষধালয়ের "মৃতসঞ্জীবনী", ইস্টবেঙ্গল বেডিং হাউস, উত্তম-সৌমিত্র'র "ঝিন্দের বন্দী"র ব্যানার।
ব্যস্ত রাস্তায় বাসের এখন শামুকের গতি, অনেকেই চলতি বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে যাচ্ছে। দোকানের ট্রানজিস্টর থেকে ভেসে আসছে পেয়ার্সন সুরিটা / ব্যারি সর্বাধিকারীর ক্রিকেট ধারাভাষ্য, পিচকারি উঠিয়ে ডাব কাটছে এক বিক্রেতা, পাশেই হাতে ডাবের খোল নিয়ে দাঁড়িয়ে এক ক্রেতা, দা দিয়ে ফালি করে দিলে ভেতরের শাঁস খাবে বলে।
পরপর বসেছে আম কলা জামুন জামরুল পেয়ারা ফুল-ফলের ব্যাপারীরা -- বড় নীলমাছিরা ঘুরে ফিরে বসছে কাটা ফলের ওপর -- ভিজে রাস্তায় ফল-ফুলের পাতা, শালপাতা ছড়ানো -- তার ওপর পা টিপে টিপে দশকর্মার দোকান থেকে নকুলদানা আর শালগ্রাম শিলা হাতে নিয়ে সন্তর্পনে চলেছেন পুরুতঠাকুর, বাড়ির রান্নার ঠাকুর দর কষে চলেছে তার দামে তিন আঁটি কলমী শাকের জন্য, এরই মধ্যে কেক-বিস্কুটের দোকানে ঝাঁটার বাড়ি খেয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে রাস্তার কুকুর, লটারীর দোকানে নম্বর মেলাচ্ছে আর ব্যাজার মুখে টিকেট ছিঁড়ে ফেলছে ২-১ জন, কাপড়ের দোকানে ঝাঁট দিয়ে ধুনা জ্বালিয়ে মশা তাড়াচ্ছে দোকানি ।
এগিয়ে যাবার জন্য রাস্তা খুঁজছে ট্রাম বাস মোটরগাড়ি সাইকেল আর পথচারীরা -- গাড়ীর হর্ন, পুলিশের বাঁশী, ট্রামের টংটং, মুটে-মজুরের দৌড়াদৌড়ি, মানুষের কোলাহল -- সব মিলিয়ে জমজমাট শ্যামবাজার। বাগবাজারের মুখে মিষ্টির দোকান থেকে হাওয়ায় বয়ে আনছে জিলেবী কচুরী নারকেল দেওয়া ছোলারডালের গন্ধ, স্টেট ব্যাংকে দৌড়ে দৌড়ে রোজের মত আজও দেরিতে ঢুকলো এক কর্মচারী, তাকে দেখে ঘড়ি দেখলো ব্যাংকের দ্বারবান। যাত্রীরা একে একে নেমে চলো যে যার গন্তব্যে। এটাই ট্যার্মিনাস -- এখানেই এখন মিনিট পনেরোর বিশ্রাম নেবে ৩০-এ, তারপর ফিরতিপথে সেই সিঁথি।