Wednesday, September 22, 2021

এই তো সেদিন

 এই তো সেদিন 


বাঁধের পশ্চিমে তখন সূর্য ঢলো ঢলো. পায়ের খুরে বাঁধের মাটি উড়িয়ে বাথানে ফিরছে গরুর পাল, তাদের পিছনে বারো'মাইলের হাট থেকে মাথায় পোটলা নিয়ে ফিরছে কয়েকজন। পাশের কাদুয়া'দির কঞ্চির বেড়াতে ঝিঙ্গার লতায় হলুদ ফুলের পসরা,  ভোমরারদল তাদের শেষ মধুটুকুও শুষে নিয়ে গেছে। এখন আমার পড়তে যাবার সময়, প্রায় আধ মাইল দূরে, মোক্ষদা'র কাছে। মোক্ষদা একা থাকে তার তালপাতা দিয়ে বানানো এক চালের মাটির ঘরে। প্রায় সত্তরের কাছাকাছি সে, সামান্য ঝুঁকে চলে, মাথায় সাদা চুল, ফর্সা মুখে কপালে বয়েসের ভাঁজ। গ্রামের লোকের দয়াতেই সে বেঁচে আছে। দিনের বেলায় তাকে দেখেছি আমার মা'র কাছেও আসতে, সাদা কাপড়ের খুঁটে বেঁধে নিয়ে যেত চাল বা আনাজ। মোক্ষদা স্বাক্ষর ছিল, তাই মা তার কাছেই পাঠাত আমার বর্ণ পরিচিতির জন্য। প্রায় ওড়িষ্যা ঘেঁষা বলে বাংলা না, ওড়িয়াতে ছিল মোক্ষদার প্রাথমিক শিক্ষা, আর আমাকেও সে ওড়িয়াতেই অ আ শেখাতো।
হাতে স্লেট-পেন্সিল নিয়ে বাঁধের রাস্তা ধরে সন্ধ্যায় হেঁটে যাওয়া উঠতি পড়ুয়ার। ওপারের প্রান্তজুড়ে পড়ে থাকা ধানের ক্ষেত, ক্যানালে বাঁশের নোঙ্গরে বাঁধা ডিঙি নৌকা, ঘুঁটের ধোঁয়ার আস্তরণে আস্তে আস্তে ভারী হচ্ছে চারপাশ, বেঁটে নীমগাছের গোড়ায় কেউ জ্বালিয়ে গেছে প্রদীপ। বিশাল বটের কাছে যেতেই ওপরে পাখীদের চেঁচামিচি, নিচের মাটির চাতালে গল্প গুজব শেষ করে বুড়োরা যে যার ঘরে ফিরে যাবার পথে।
তালপাতার চাটাইয়ে বসে স্লেটে মোক্ষদার লেখা অ আ'র ওপর হাত বোলাচ্ছি, পাশে মাটির ঊনানে মাটির সানকিতে গরম বালীতে মুড়ী বানাচ্ছে মোক্ষদা, বাঁশের চোঙ্গায় ফুঁ দিয়ে আগুনের আঁচ বাড়াচ্ছে মাঝে মাঝে। ঘুঁটের আগুনের আঁচে থেকে থেকে খুব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে তার মুখে কপালে সময়ের দাগগুলো। দারিদ্র বা আপন-পর বোঝার বয়েস ছিল না সেই আমার, কিন্তু মোক্ষদাকে আমার খুব ভালো লাগতো, ভালো  লাগতো সে যখন ময়লা স্লেট ময়লা মুছে আবার নতুন করে হরফ লিখে দিতো, ভালো লাগতো যখন সে কাপড়ে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে দিতো আমার দিকে গরম মুড়ির বাটী বা আমার  থুতনীতে হাত দিয়ে স্নেহ প্রকাশ করতো।।
প্রায় এক ঘন্টার পর বাড়ি ফেরার সময়। ততক্ষনে বিশাল বটগাছে পাখীর চেঁচামেচী শেষ, কেবল থেকে থেকে বাদুড়ের পাখার ঝাপ্টার শব্দ। ফণীমনসার ঝোপে কোন সরীসৃপের আসা-যাওয়া, কার আঙিনায় বিশ্রাম নিচ্ছে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ধান ভাঙার ঢেঁকি, আঁধারে ঢেকে গেছে ও পাড়ের ধানের ক্ষেত, কাদুয়া'দির ঝিঙার বেড়ায় তখন অজস্র জোনাকীর আনাগোনা।
রাতে মায়ের পাশে শুয়ে ঘুম ভেঙে গেলে অন্ধকারে মা'র মুখ দেখে ভাবতাম, আমার মা'র মুখে কপালেও  কি একদিন ভাঁজ পরবে, ঝুঁকে চলবে ? আর সেই সাথে এক প্রশ্ন, মোক্ষদা কেন একা থাকে, আমাদের সাথেও তো থাকতে পারে!
এখন আমিও স্বাক্ষর কিন্তু ছোটবেলার সব প্রশ্নের উত্তর এখনো পেলাম না।

Sunday, September 12, 2021

গাড়ীর নাম মাহাত্ম

 গাড়ীর নাম মাহাত্ম

যেমন আপনার নামই আপনার পরিচয়, তেমনি গাড়ীর নম্বর প্লেটও তার নাম, তার পরিচয় -- তার রেজিস্ট্রেশন বই হলো তার আধারকার্ড।
পশ্চিম বাংলার নম্বর প্লেট নিয়ে অন্য রাজ্যে ঢুকুন, ট্রাফিক পুলিশ এমন ভাবে আপনাকে দেখবে যেন আপনি গাড়ী চুরি করে পালাছেন ভিনদেশে। গুজরাটের ভাড়া ট্যাক্সি নিয়ে জয়পুর গেছিলাম, ট্রাফিক পুলিশ ড্রাইভারের সব কাজগপত্র ঘেঁটে কিছু গোঁজামিল না পেয়েও খসখস করে চালান খাতায় এক হাজার টাকার জরিমানা লিখে দিলো। কি কারণ ? ভাড়ার ট্যাক্সি ড্রাইভার কেন তাদের জন্য নির্দিষ্টকরা পোশাক ( সেটা কি জানি না) পড়েনি, সেই জন্য, মানে, সেই বাঘ-ছাগলের গল্প -- তুই জল ঘোলা করিসনি তো তোর বাপ বা ঠাকুরদা করেছে, তোকে আমি খাবই। বিভিন্ন রাজ্যে পরিবহন ও ট্রাফিকের আলাদা আলাদা কানুন, সবাই কি তার খোঁজ রাখে? সাধারণে জরুরী কাগজপত্র (রেজিস্ট্রেশন, বীমা, PUC, রোড ট্যাক্স আর ড্রাইভিং লাইসেন্স) নিজের সাথেই রাখে, ভিনরাজ্যে গেলে বিশেষতঃ। কিন্তু হাজার কানুনে যে আপনি বাঁধা, সেটা জানেন কি ?
আহমেদাবাদে ঢোকার মুখেই পুলিশ চৌকি, জাতীয়সড়কের বাঁকে ওতপেতে বসে আছে পুলিশ, অন্য জেলার বা রাজ্যের নম্বর দেখলে ইশারাতে রাস্তার পাশে ডেকে নেবে, নানা কানুনে আপনাকে পরখ করবে, যদি ট্রাক হয় তবে কপালে আরও দুঃক্ষ, পুরা ট্রাক তল্লাশি করবে -- কিছু না পেয়ে নিখরচায় যেতে দেবে, এমনটা খুব কম হয়।
শুনেছিলাম, উদয়পুরে নাকি গুজরাটের গাড়িকে পাশ দিয়ে এগিয়ে যাবার পথ ছাড়ে না, পরে নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলাম, যা রটে তার কিছুটা তো বটে!
রক্তের সম্পর্ক বড় সম্পর্ক। ভিনরাজ্যে রাস্তায় আপনার গাড়ীর কোনো যান্ত্রিক বিভ্রাটে আপনার রাজ্যের কোনো গাড়ীর চালক দেখলে, তার থেকে সহায়তা পাবেন, কিছু পেট্রলের প্রয়োজনে, গাড়ীর টায়ার পাল্টাতে বা ওই জাতীয় কিছু প্রয়োজনে।
"নামে কি আসে যায়" যে বলেছিলো, তার গাড়ি ছিলোনা, তার কথা বাদ দিন, গাড়ীর বেলায় সেই কথা খাটে না।