Wednesday, August 14, 2024
এই বর্ষায়
এই বর্ষায়
======
সেই আশির দশকে ভারতে এলো সুপার কম্পিউটার, কৃষির অগ্রগতিকে মদত করতে মৌসম বিভাগ জানালো এখন থেকে আর ৭-৮ টা না, প্রায় ৩২ টা variable বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেবে।
২০২৪ এর ভবিষৎবাণীতে ছিল খুব গরম পড়বে, পড়েও ছিল সারা দেশ জুড়ে, আহমেদাবাদেও। আলফানসো আম মে মাসের শুরুতে ১২০০-১৪০০ টাকা/ডজনে আবির্ভাব হলেও, দ্রুত পতন হয়েছিল তার বাজার দামে, সময় সামান্য এগোতেই এসেছিলো স্থানীয় কেশর আম। শহরে দিনরাত এয়ারকন্ডিশনার চলেছিল, কুকুর ও পাখিদের জন্য মিউনিসিপালিটি এখানে ওখানে সিমেন্টের গামলা রেখেছিলো, যাতে স্থানীয়রা তাতে জল দিতে পারে স্নান ও পানের জন্য। মাঝ দুপুরে রাস্তায় যান চলাচল প্রায় ছিলই না -- তাপমান ৩৩--৪৬ ডিগ্রীতে আটক ছিল --- স্কুলের সময় ও বদলে দেওয়া হলো সেই সাথে।
জুনের মাঝ থেকে শুরু হলো কালো মেঘেদের ঘোরাঘুরি, সেই সুদূর দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে এসে পশ্চিমঘাট পার হয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে তার প্রবেশ। আবহাওয়া অফিস বললো, তৈরী থাকো সবাই, এবারে কিন্তু দেরীতে হলেও মৌসুমী বর্ষা দেশে দাপাবে। সেই আশংকায় রাস্তার বড়ো নীম বাবুল পাকুড়ের ডাল ছাঁটা শুরু হল, কৃষ্ণচূঁড়াদের বরাতে জুটলো বাটি ছাঁট।
আগে কখনো কখনো এমন হতো -- সিনেমা হলের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হলো, কিন্তু প্রজেক্টরের সামান্য গন্ডগোলে সিনেমা শুরু হতে দু-তিন মিনিট দেরি হতো। মেঘ তো আসলো, বাতাস ও উড়লো, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। মাঝ জুলাই পর্যন্ত চললো সেই মেঘে ঢাকা সব দিন, তারপরেই নামলো বর্ষা।
পরেশ ধরের লেখা ও বেচু দত্তের "ওরে ও মাঝি" গানের একটা লাইন ছিল "কালো মেঘের ডানার ঝাঁকে ঝড়ের বাদুড় আকাশ ঢাকে" -- শেষ জুলাই থেকে শুরু হলো সেই আকাশ মল্লার গান -- পাখি গাছ সারা প্রকৃতি এমন মাথা নিচু করে রইলো যেন ০-৫ গোলে ফুটবল ম্যাচ হেরেছে, সদা মুখর ময়ূররাও সোলার প্যানেলের নিচে চুপটি বসে পেখম শুকাচ্ছে। গেটের ছাউনীতে আশ্রিত এক সারমেয় পরিবার -- মা তাদের যতই বারণ করে "ওরে আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে", তবুও বারবার ছুটে যাচ্ছে তিনটি ছানা বৃষ্টিতে ভিজতে। আরও একমাস চলবে বৃষ্টি, যদিও তার পরিমান ইতিমধ্যেই কমে আসছে।
এখন অগস্টের মাঝামাঝি, আকাশে হালকা সাদা মেঘের ছোঁয়া ইতিউতি দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতির ক্যানভাসে ঝলমল সবুজ ছড়িয়ে বর্ষা নিজেই এখন ক্লান্ত। বাসাভাঙা শালিকের ছানাটা এখন ছোট ডানা মেলতে শিখেছে, কল্কে কামিনীর মধু নিতে মৌমাছিরা সকাল থেকেই ছোটাছুটি করছে, বারান্দার টবে গোটা ছয়েক নবীন উচ্ছের মুখে হাসি।
ওদিকে ধানের খেতে হালকা হলুদের ছোঁয়া লাগলো বলে, ল্যাংড়া আমের চালান কমে গেছে, বাজারে আসছে হরেক রঙের শাক-সব্জী। বাতাসে শীতের হালকা পরশ, বিছানায় রাতে পায়ের নিচে হালকা চাদর রাখার সময় এখন।
শিববাবুর সঙ্গতি কম, স্বর্গের শহরতলী কৈলাসে সপরিবারে থাকেন। বছরে একবার পরিবার মায়ের বাড়ি যান সন্তানদের নিয়ে। যাবার তোড়জোড় অনেক আগে থেকেই করতে হয়, বিনা কারণে নয়। এক ছেলে কার্তিক ডিজানের শার্টপ্যান্ট ছাড়া পড়ে না, অন্যজনের ওই ব্যাপারে ঘ্যানোরপ্যানোর নেই., যা দেবে তাই পড়বে। এক মেয়ে সরস্বতী অনলাইন শপিংএ ঘরে পাহাড় বানায়, অন্যজন, নাম যার লক্ষী, সে সাধারণ তাঁতেই খুশী। তৈরী হতে ওই কার্তিক আর সরস্বতী যা সময় নেবে ওই সময়ে দশ জন তৈরী হয়ে যাবে -- তারা বাথরুমে ঢুকলে বেরোবে না, যখন বেরোবে তখন মনে হবে যেন সাবানের ফ্যাক্টরি থেকে বেরলো। ছেলে গনেশ পেয়েছে বাবার স্বভাব, সে বারান্দায় বালতিতে স্নান করে। শিববাবু যাতায়াতের খরচ তেমন দেন না -- সরস্বতী নিজের কার্ড দিয়ে অনলাইন পুষ্পক বুক করে, বছরের জমানো পয়সা লক্ষী তার মা কে দিয়ে দেয় বাকি খরচের জন্য।
সেই ঠাকুর পরিবারও অধৈর্য হয়ে পড়ছে, কবে বৃষ্টির মৌসমের সমাপ্তি হবে আর তারা পুষ্পকে চড়বে। তারা জানালা দিয়ে দেখে -- নিচে, বহু দূরে, কাশফুল ফুটেছে কি না, ধান কাটা হচ্ছে কি না, মাটিতে ভোরের শিউলী আল্পনা দিয়েছে কি না, গাঁয়ের বৌ মাটির বাসনে নতুল চালের ফেনা ভাত বসিয়েছে কি না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment