শ্রী বিধায়ক ভট্টাচার্য -- একাধারে লেখক,
নাট্যকার, নির্দেশক এবং গীতিকার
শ্রী বগলাচরন ভট্টাচার্য ছিল ওনার আসল নাম
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, সেই "মধুসংলাপী" বিধায়ক ভট্টাচার্য (১৯০৭-১৯৮৬) ছিলেন অমৃত বাজার পত্রিকা আর যুগান্তর-এর
সাংবাদিক, পরে কয়েকটি
বিনোদন পত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন, আবার বিশ্বভারতী,
শান্তিনিকেতন-এ শিক্ষকতাও
করেছেন। বিধায়ক অনেক ছোট গল্প, উপন্যাস ও নাটক লিখেছেন, নাট্যরূপ দিয়েছেন। বেশিরভাগ নাটকই সমসাময়িক সামাজিক পরিস্থিতির
ওপর লেখা। ত্রিশের দশকের বাংলা নাটক ইতিহাস ও পুরানের কাহিনী ঘিরেই আবর্তিত হত -- বিধায়ক সেই
জায়গায় আনলেন মধ্যবিত্ত বাঙালীর জীবনের কথা, তুলে ধরলেন
সামাজিক বাস্তবতা। নাটকের আঙ্গিকে অনেক
নূতনত্ব আনলেন -- ঘূর্নায়মান মঞ্চে
নাটকের উপস্থাপনা, নাটকে ফ্লাস-ব্যাক, স্বগতোক্তীর জন্য মাইক্রোফোনের ব্যবহার, "থিয়েটারস্কোপ"-এর প্রয়োগ (মঞ্চকে চার ভাগে ভাগ করে যে অংশে নাটক চলছে, শুধু সেখানেই আলোকপাত), এ সব বাংলা
নাটকে বিধায়কেরই অবদান।
মেঘমুক্তি (১৯৩৮), মাটির ঘর, বিশ বছর আগে (১৯৩৯), রত্নদীপ (১৯৪০), রক্তের দাগ, তুমি ও আমি, কুহকিনী (১৯৪১), চিরন্তনী (১৯৪২) খেলাঘর (১৯৪৬), রাজপথ (১৯৪৯), খবর বলছি (১৯৫০), ক্ষুধা (১৯৫৭), লগ্ন (১৯৬৪) --
বিধায়কের নামকরা কয়েকটি নাটকের নাম,
সে সব মঞ্চস্থ হত রঙমহল, মীনার্ভা, বিশ্বরূপা, কালিকা
থিয়েটারস-এ। কিরণ মিত্রের লেখা মূল নাটকের বর্ধিত রূপ দিয়েছিলেন "সেতু" নাটকে, সেই নাটক এক সময় রেকর্ড করেছিল ১০৮২ রজনী মঞ্চস্থ হয়ে, "ক্ষুধা" চলেছিল ৫৭৩ রজনী। বিধায়কের লেখা একাঙ্ক নাটক "তাহার
নামটি রঞ্জনা" (শম্ভু
মিত্র-তৃপ্তি মিত্র) খুবই জনপ্রিয় ছিল।
অনেক ছায়াছবির পরিচালক ছিলেন বিধায়ক -- কৃষ্ণ কাবেরী (১৯৪৯), কা তব কান্তা (১৯৫২), চিরন্তনী (১৯৫৩) এবং আরো অনেক ছবিতে নির্দেশনার
কাজ করেছেন। অনেক ছায়াচিত্র বিধায়কের লেখা গল্পের ওপর প্রস্তুত হয়েছে, যেমন: মাটির ঘর (১৯৪৪), নতুন তীর্থ (১৯৬৪), গৃহলক্ষ্মী (১৯৪৫, সহ-লেখক), ঢুলী (১৯৫৪, সহ-লেখক ), পৃথিবী আমারে চায় (১৯৫৭, নাট্যরূপও দিয়েছিলেন), দেয়া নেয়া (১৯৬৩), এই করেছ ভালো
(১৯৭০)। বাংলাদেশী ছায়াছবি "আকাশ আর মাটি" (১৯৫৯) বিধাযকের গল্পের
ওপর নির্মীত হয়েছিল। ভ্রান্তিবিলাস (১৯৬৩)
ছায়াছবির নাট্যরূপ, সংলাপ ও একজন গীতিকার ছিলেন বিধায়ক। নিজেও ভালো অভিনয় করতেন -- ঢোলগোবিন্দের
করচা (১৯৬৬), ভ্রান্তিবিলাস (১৯৬৩),
ত্রিধারা(১৯৬৩) , অবশেষে (১৯৬৩) এবং আরো অনেক ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। গান ও গাইতেন বিধায়ক, নজরুলের কাছে গানের তালিম ও নিয়েছিলেন, সাহিত্যিক বিভূতিভূসন বন্দোপাধ্যায় বিধায়কের গান শুনেছেন বলে লিখেছেন। নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন(১৯৬১),
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৭) এবং আরও অনেকে বিধায়ককে নানান পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন।
সেই বিধায়ক কিছু গানের গীতিকার
ছিলেন। "দূরের মানুষ কাছে এসো" কখনো পুরানো হবে না, আর বাংলায়
ফেরীওলাদের গানের বিভাগে "নীলামবালা" সবার মনে থাকবে।
বিধায়ক
ভট্টাচার্যর লেখা গান
|
||||
গান
|
ছায়াছবি
|
সুরকার
|
শিল্পী
|
সন
|
নীলামবালা
ছ'আনা
|
পৃথিবী আমারে চায়
|
নচিকেতা ঘোষ
|
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
|
১৯৫৭
|
দূরের মানুষ কাছে এসো
|
পৃথিবী আমারে চায়
|
নচিকেতা ঘোষ
|
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
|
১৯৫৭
|
প্রেম করা কি জ্বালা
|
অসমাপ্ত
|
অনিল বাগচী
|
আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ধনঞ্জয়
ভট্টাচার্য
|
১৯৫৬
|
ভ্রান্তিবিলাস *
|
১৯৬৩
|
|||
* নির্দিষ্ট গানটি জানা যায় নি
|
(গানটি শুনুন)
***** এই লেখা থেকে যদি
কেউ তথ্য নিয়ে অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করেন, আশা করব স্বীকৃতি প্রদান
করবেন।
No comments:
Post a Comment