সিঁথীর শ্রাবনের মেলা
সেই ১৯৫৫-৬৫'এর কথা। দুর্গাপূজা কালীপূজার মতোই রথযাত্রা ঝুলন শৈশবে অপেক্ষায় থাকা ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠান ছিল, যদিও সময় ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা মহত্ব খুইয়েছে। জনজীবন তার সারল্য হারিয়েছে, শৈশব বঞ্চিত হয়েছে সামূহিক উৎসবে ভাগিদারীর আনন্দ থেকে।
শ্রাবন আসলেই বসতো মেলা। শহরতলী সিঁথীর নানান পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বসতো সেই মেলা, বরানগরে তেমন কিছু হতো বলে মনে পড়ে না। কালীতলায় আমার মহল্লায়ও একদিনের মেলা বসতো -- বাসস্ট্যান্ড আর শিবনাথ ক্লাবের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার জুড়ে বসতো সেই শোরগোলের মেলা, দুপুর থেকে সন্ধ্যা গড়ানোর পরেও চলতো বেচাকেনার ভীড়।
কালীতলার বাঙালবাড়ীর ছেলেৱা লিস্ট বানিয়ে ফেলেছে ঝুলনযাত্রার প্রদর্শনী সাজানোর জন্য কি কি জিনিস কিনতে হবে -- পাহাড়ের ওপরে বসবেন মহাদেব ঠাকুর, পেছনের বালতির জল সাইফন হয়ে তাঁর মাথার ওপর থেকে মন্দাকিনী বইবে, জঙ্গলে থাকবে বাঘ সিংহ হরিণ, গাছে বসবে রঙীন পাখী, লাল মাটির পথ বেয়ে সমতলে থাকবে একটা মন্দির আর সরোবর, যার জলে আওয়াজ তুলে ঘুরবে একটা নৌকা (কার্বাইড না কেরোশিনে, মনে নেই) -- কাঁখে কলস নিয়ে জল তুলতে আসবে গ্রামের বৌ, সাথে তার বাছা। কাদা মাটি ইঁট ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ১০x ১০-এর মণ্ডপ সাজানো হয়ে গেছে, চাঁদা তোলাও শেষ, এখন শ্রাবনের মেলা থেকে পুতুল কেনার অপেক্ষা।
ঢোকার মুখেই বিক্রী হচ্ছে নানান রঙের বেলুন, ছোট বড় তো আছেই, আছে বেলুনের ঝুমঝুমি, আছে বেলুন দিয়ে বানানো লম্বা লেজের বাঁদর পাখী সাপ, গ্যাস বেলুনের জায়গা ঘিরে কচিদের ভীড়। কাগজে বানানো কুমীর তার লেজ হেলিয়ে, পিঠে ঢেউ তুলে গড়গড় করে চলেছে সুতোর টানে আর ভয়ে দু'পা পিছোচ্ছে বাচ্চারা।
তার সাথে পাল্লা দিয়ে গড়িয়ে চলছে ঢাকের বাদ্যি -- গোল মাটির পাত্রের ওপর চামড়া লাগানো, সুতো-কাঠি দিয়ে এমন কৌশলে বানানো যে চাকা গড়ালেই কাঠি পড়বে চামড়ায় আর বাজবে বাদ্যি।
হটাৎ কোথা থেকে সামনে থেকে আসলো ছোবল তোলা সাপ -- বাঁশের সরু কঞ্চি দিয়ে ভাঁজ করে বানানো ফ্রেম, লেজের দিকে চাপ দিলেই ফ্রেম লম্বা হবে আর সাপের মাথা তেড়ে আসবে অসতর্কের দিকে। এর কাছেই পাবেন কাঠিতে স্প্রিং লাগানো বানর, ওপর থেকে নামছে কেঁপে কেঁপে।
পাশেই বিক্রি হচ্ছে সেই জলে চলা নৌকা, সাথে পাবেন এমন এক টিনের ব্যাঙ যার পেট টিপলেই আওয়াজ বেরোবে। এই আওয়াজ করা ব্যাঙ একবার নৈনান পাড়ার সহপাঠী শ্রীমান স্বরাজ সাহা স্কুলে এনে খুব বকুনি খেয়ে ছিল।
সব আওয়াজ ছাপিয়ে এর মাঝে চীৎকার কেঁদে উঠলো এক বাচ্চা -- গেলো গেলো রব শেষ না হতেই তার হাতের গ্যাস বেলুন আকাশপাড়ি দিয়েছে দমদম রেল লাইনের দিকে, বাচ্চাকে থামাতে আবার উল্টোমুখী হলো তার মা-বাবা, সেই গ্যাস বেলুনের জায়গায়। এক কান্না না থামতেই আর এক কান্না -- কাঠি থেকে আধখানা খসে পড়েছে এক খুকুর হাতের কমলা রঙের আইসক্রিম, ফের দৌড়াও সেই "ম্যাগনোলিয়া" ঠেলার কাছে, কেনো আর একটা। ততক্ষনে তার পাশেই এসে দাঁড়িয়েছে "বুড়ীর মাথার পাকাচুল" আর আঠার মতো এক ক্যান্ডি, বড় বাঁশের ওপরে লাগানো একটা কি যেন মাখা থেকে ছোট বাঁশের স্টিকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নানান ফুলের আকার করে বিক্রি করছে -- ললিপপের মতো ওটাকে চেটে চেটে খেতে হয়।
ছাতি খুলে বসেছে একজন মঠ ফুটকরাই সিগাটের-লজেন্স নিয়ে -- ভরসা নেই আকাশের, যদি বৃষ্টিতে চিনির জিনিস নষ্ট হয়ে যায়`! মঠের বাহার দেখো -- একটা বিগবেন তো অন্যটা মনুমেন্টের মতো, পাখী ফুলের আকার তো আছেই।
হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ফ্রক পরে, লম্বা বিনুনি দুলিয়ে পাড়ার তিন ষোড়শী বান্ধবী রিনি-বিনি-টিনি আসলো মেলায় -- পান-বিড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মেলা থেকেই কেনা সেঁকা ভুট্টা খাচ্ছিলো আটাপাড়ার উঠতি বয়েসের ছেলেটি, ওদের দেখেই পকেটের রঙিন চশমাটা পরে নিলো। তিন বান্ধবী কিনবে নিজেদের জন্য কাঁচের চুড়ি, নেল-পলিশ আর মাথার টিপ, মায়েদের জন্য চাই সাবিত্রী আলতা আর সিঁদুর।
দামিনী পিসীর রুটি বেলার চাকির একটা পা গেছে ভেঙে, কাঠের জিনিসের দোকানে সমানে বিনতি করে চলেছে একটা রুটির চাকী দেবার জন্য, কিন্তু দোকানদার রাজি না -- চাকী নিলে বেলান ও নিতে হবে, কেননা ওটা "যৌথ পণ্য"।
পুতুলের দোকানে খুব ভীড় -- সমস্ত দেব-দেবী, নভোচর উভচর জলচর সব রকমের প্রাণী ছাড়াও আছে নেতাজী রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। বাঙালবাড়ীর ছেলেরা পুতুলের দোকান থেকে দরকারী সব পুতুল কিনে ফিরে যাচ্ছে হাসি ভরা মুখে, কয়েকটা সামান্য ভাঙা মাটির পুতুল দোকানি বিনে পয়সায় দিয়েছে ওদের, তাই বেশি খুশি।
দোকানী দামিনী পিসীকে নিরাশ করেনি, অল্প দামেই একটা চাকী তাকে দিয়েছে, সেটা হাতে নিয়ে প্রফুল্ল মনে পিসী চলেছে বাড়ির পথে।
সন্ধ্যার পরেও হ্যাজাকের আলোয় শিবনাথের মাঠে ছোটরা কাঠের বাঘ ঘোড়ার নাগরদোলায় চড়ছে, একেবারে ছোটরা বড়দের কোলের নির্ভয় আশ্রয়ে বসে খুদে খুদে চোখে দেখছে কাছ থেকে দূরে সরে সরে যাওয়া মানুষদের। পাশেই ঘুগনী কুলফীর স্বাদ নিচ্ছে বড়োরা।
মেলা ভাঙার সময় এগিয়ে এলো -- দোকানীরা গোছাতে শুরু করেছে তাদের সামগ্রী, মাথার ঝাঁকিতে ভরে নিয়ে যাচ্ছে পুতুল খেলনা মঠ কাঁচের চুড়ী। আবার আসবে শ্রাবণ, বসবে মেলা, রাস্তা মাঠ আবার বাঁশি ভেঁপু ডুগডুগীতে সরগরম হবে। অনেক বছর পরে মেলায় আসলে আর দেখা যাবে না সেই তিন ষোড়শীকে, অন্য কোনো দামিনী পিসী আসবে তার রান্না ঘরের জিনিস কিনতে, আটাপাড়ার সেই নতুন যুবকও ব্যস্ত হয়ে পড়বে জীবনের সংঘর্ষে। পাত্রপাত্রী বদলাবে, সাথে মেলার চরিত্রও।
সেই ১৯৫৫-৬৫'এর কথা। দুর্গাপূজা কালীপূজার মতোই রথযাত্রা ঝুলন শৈশবে অপেক্ষায় থাকা ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠান ছিল, যদিও সময় ও সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে তারা মহত্ব খুইয়েছে। জনজীবন তার সারল্য হারিয়েছে, শৈশব বঞ্চিত হয়েছে সামূহিক উৎসবে ভাগিদারীর আনন্দ থেকে।
শ্রাবন আসলেই বসতো মেলা। শহরতলী সিঁথীর নানান পাড়ায় ঘুরে ঘুরে বসতো সেই মেলা, বরানগরে তেমন কিছু হতো বলে মনে পড়ে না। কালীতলায় আমার মহল্লায়ও একদিনের মেলা বসতো -- বাসস্ট্যান্ড আর শিবনাথ ক্লাবের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার জুড়ে বসতো সেই শোরগোলের মেলা, দুপুর থেকে সন্ধ্যা গড়ানোর পরেও চলতো বেচাকেনার ভীড়।
কালীতলার বাঙালবাড়ীর ছেলেৱা লিস্ট বানিয়ে ফেলেছে ঝুলনযাত্রার প্রদর্শনী সাজানোর জন্য কি কি জিনিস কিনতে হবে -- পাহাড়ের ওপরে বসবেন মহাদেব ঠাকুর, পেছনের বালতির জল সাইফন হয়ে তাঁর মাথার ওপর থেকে মন্দাকিনী বইবে, জঙ্গলে থাকবে বাঘ সিংহ হরিণ, গাছে বসবে রঙীন পাখী, লাল মাটির পথ বেয়ে সমতলে থাকবে একটা মন্দির আর সরোবর, যার জলে আওয়াজ তুলে ঘুরবে একটা নৌকা (কার্বাইড না কেরোশিনে, মনে নেই) -- কাঁখে কলস নিয়ে জল তুলতে আসবে গ্রামের বৌ, সাথে তার বাছা। কাদা মাটি ইঁট ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ১০x ১০-এর মণ্ডপ সাজানো হয়ে গেছে, চাঁদা তোলাও শেষ, এখন শ্রাবনের মেলা থেকে পুতুল কেনার অপেক্ষা।
ঢোকার মুখেই বিক্রী হচ্ছে নানান রঙের বেলুন, ছোট বড় তো আছেই, আছে বেলুনের ঝুমঝুমি, আছে বেলুন দিয়ে বানানো লম্বা লেজের বাঁদর পাখী সাপ, গ্যাস বেলুনের জায়গা ঘিরে কচিদের ভীড়। কাগজে বানানো কুমীর তার লেজ হেলিয়ে, পিঠে ঢেউ তুলে গড়গড় করে চলেছে সুতোর টানে আর ভয়ে দু'পা পিছোচ্ছে বাচ্চারা।
তার সাথে পাল্লা দিয়ে গড়িয়ে চলছে ঢাকের বাদ্যি -- গোল মাটির পাত্রের ওপর চামড়া লাগানো, সুতো-কাঠি দিয়ে এমন কৌশলে বানানো যে চাকা গড়ালেই কাঠি পড়বে চামড়ায় আর বাজবে বাদ্যি।
হটাৎ কোথা থেকে সামনে থেকে আসলো ছোবল তোলা সাপ -- বাঁশের সরু কঞ্চি দিয়ে ভাঁজ করে বানানো ফ্রেম, লেজের দিকে চাপ দিলেই ফ্রেম লম্বা হবে আর সাপের মাথা তেড়ে আসবে অসতর্কের দিকে। এর কাছেই পাবেন কাঠিতে স্প্রিং লাগানো বানর, ওপর থেকে নামছে কেঁপে কেঁপে।
পাশেই বিক্রি হচ্ছে সেই জলে চলা নৌকা, সাথে পাবেন এমন এক টিনের ব্যাঙ যার পেট টিপলেই আওয়াজ বেরোবে। এই আওয়াজ করা ব্যাঙ একবার নৈনান পাড়ার সহপাঠী শ্রীমান স্বরাজ সাহা স্কুলে এনে খুব বকুনি খেয়ে ছিল।
সব আওয়াজ ছাপিয়ে এর মাঝে চীৎকার কেঁদে উঠলো এক বাচ্চা -- গেলো গেলো রব শেষ না হতেই তার হাতের গ্যাস বেলুন আকাশপাড়ি দিয়েছে দমদম রেল লাইনের দিকে, বাচ্চাকে থামাতে আবার উল্টোমুখী হলো তার মা-বাবা, সেই গ্যাস বেলুনের জায়গায়। এক কান্না না থামতেই আর এক কান্না -- কাঠি থেকে আধখানা খসে পড়েছে এক খুকুর হাতের কমলা রঙের আইসক্রিম, ফের দৌড়াও সেই "ম্যাগনোলিয়া" ঠেলার কাছে, কেনো আর একটা। ততক্ষনে তার পাশেই এসে দাঁড়িয়েছে "বুড়ীর মাথার পাকাচুল" আর আঠার মতো এক ক্যান্ডি, বড় বাঁশের ওপরে লাগানো একটা কি যেন মাখা থেকে ছোট বাঁশের স্টিকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নানান ফুলের আকার করে বিক্রি করছে -- ললিপপের মতো ওটাকে চেটে চেটে খেতে হয়।
ছাতি খুলে বসেছে একজন মঠ ফুটকরাই সিগাটের-লজেন্স নিয়ে -- ভরসা নেই আকাশের, যদি বৃষ্টিতে চিনির জিনিস নষ্ট হয়ে যায়`! মঠের বাহার দেখো -- একটা বিগবেন তো অন্যটা মনুমেন্টের মতো, পাখী ফুলের আকার তো আছেই।
হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ফ্রক পরে, লম্বা বিনুনি দুলিয়ে পাড়ার তিন ষোড়শী বান্ধবী রিনি-বিনি-টিনি আসলো মেলায় -- পান-বিড়ির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মেলা থেকেই কেনা সেঁকা ভুট্টা খাচ্ছিলো আটাপাড়ার উঠতি বয়েসের ছেলেটি, ওদের দেখেই পকেটের রঙিন চশমাটা পরে নিলো। তিন বান্ধবী কিনবে নিজেদের জন্য কাঁচের চুড়ি, নেল-পলিশ আর মাথার টিপ, মায়েদের জন্য চাই সাবিত্রী আলতা আর সিঁদুর।
দামিনী পিসীর রুটি বেলার চাকির একটা পা গেছে ভেঙে, কাঠের জিনিসের দোকানে সমানে বিনতি করে চলেছে একটা রুটির চাকী দেবার জন্য, কিন্তু দোকানদার রাজি না -- চাকী নিলে বেলান ও নিতে হবে, কেননা ওটা "যৌথ পণ্য"।
পুতুলের দোকানে খুব ভীড় -- সমস্ত দেব-দেবী, নভোচর উভচর জলচর সব রকমের প্রাণী ছাড়াও আছে নেতাজী রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। বাঙালবাড়ীর ছেলেরা পুতুলের দোকান থেকে দরকারী সব পুতুল কিনে ফিরে যাচ্ছে হাসি ভরা মুখে, কয়েকটা সামান্য ভাঙা মাটির পুতুল দোকানি বিনে পয়সায় দিয়েছে ওদের, তাই বেশি খুশি।
দোকানী দামিনী পিসীকে নিরাশ করেনি, অল্প দামেই একটা চাকী তাকে দিয়েছে, সেটা হাতে নিয়ে প্রফুল্ল মনে পিসী চলেছে বাড়ির পথে।
সন্ধ্যার পরেও হ্যাজাকের আলোয় শিবনাথের মাঠে ছোটরা কাঠের বাঘ ঘোড়ার নাগরদোলায় চড়ছে, একেবারে ছোটরা বড়দের কোলের নির্ভয় আশ্রয়ে বসে খুদে খুদে চোখে দেখছে কাছ থেকে দূরে সরে সরে যাওয়া মানুষদের। পাশেই ঘুগনী কুলফীর স্বাদ নিচ্ছে বড়োরা।
মেলা ভাঙার সময় এগিয়ে এলো -- দোকানীরা গোছাতে শুরু করেছে তাদের সামগ্রী, মাথার ঝাঁকিতে ভরে নিয়ে যাচ্ছে পুতুল খেলনা মঠ কাঁচের চুড়ী। আবার আসবে শ্রাবণ, বসবে মেলা, রাস্তা মাঠ আবার বাঁশি ভেঁপু ডুগডুগীতে সরগরম হবে। অনেক বছর পরে মেলায় আসলে আর দেখা যাবে না সেই তিন ষোড়শীকে, অন্য কোনো দামিনী পিসী আসবে তার রান্না ঘরের জিনিস কিনতে, আটাপাড়ার সেই নতুন যুবকও ব্যস্ত হয়ে পড়বে জীবনের সংঘর্ষে। পাত্রপাত্রী বদলাবে, সাথে মেলার চরিত্রও।
No comments:
Post a Comment