Sunday, August 8, 2021

কুহেলী আরাবল্লীর হাতছানি (১)

 

কুহেলী আরাবল্লীর হাতছানি (১)

(Internet-এ এই বিষয়ে অনেক ছবি ও ভিডিও থাকায়, এই লেখাতে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ পরিহার করেছি -- অনেক বেশি ভ্রমণ বিবরণও পাবেন সার্চ করলে)

COVID -এর বাধানিষেধ অসহ্য হলেই মেয়ে আর নাতি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম আরাবল্লীর আশ্রয়ে। একবার না, একাধিকবার। আমেদাবাদ থেকে আরবল্লী আপনি ৭-৮ ঘন্টায়  ছুঁয়ে ফিরে আসতে পারেন (শ্যামলাজী, পোলো'র জঙ্গল বা তরঙ্গা পাহাড় ), কমবেশি ১৫০ কিলোমিটার।  সময় থাকলে সীমানা পেরিয়ে রাজস্থানে দিনও কাটাতে পারেন (আবু পাহাড়, উদয়পুর, কুম্বলগড়, হালদিঘাটি বা রাজসমুদ্র'লেক), কমবেশী ৩০০ কিলোমিটারের দূরত্ব। গুজরাট ও রাজস্থানের সব রাস্তাই মসৃণ চওড়া, সড়কপথে যাত্রা যন্ত্রণাদায়ক না, রাস্তার পাশে আছে অনেক উত্তম ধাবা, যার খাবার ও স্বচ্ছ পরিবেশ সপরিবারে ভ্রমণের উপযুক্ত।যাতায়াতের অন্য সাধারণ ব্যবস্থা থাকলেও, নির্ঝঞ্ঝাট হয় নিজেদের গাড়ি থাকলে।

সেই হরিয়ানা থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে, দিল্লী রাজস্থান হয়ে, গুজরাটের আবুতে যাত্রা শেষ করেছে আরাবল্লী, হিমালয়ের থেকেও যার বয়েস বেশি। তার কাঁটা ঝোপ ঝাড় জঙ্গলে আশ্রয় দিয়েছে হরপ্পা সভ্যতার বিস্তার, অনেক অনেক বৌদ্ধ গুফায় গুঞ্জিত হয়েছে মানুষ ও জীবের মঙ্গল কামনার প্রার্থনা, হিন্দু ও জৈন মন্দির তো আছেই। তার কোনে কোনে এখনো লুকানো অদেখা অজানা অতীতের অনেক অনাবিষ্কৃত রহস্য, ঘন কাঁটাভরা বাবুলের আঁচলে যা চোখের আড়ালে ঢাকা রয়েছে। এই আরাবল্লী আবার বর্ষার ছোঁয়ায় সবুজে সেজে ওঠে, অতি অপরূপা তখন সে -- তার গা বেয়ে নেমে আসে ছোট বড় বর্ষাতি নদী, পাদদেশের শুষ্ক নিঃস্নেহ ঊষর প্রান্তরে শ্যামলীমা আনতে।

শ্যামলাজীর মন্দির এই মন্দিরে গদাধর বিষ্ণু আনুমানিক হাজার বছর বিরাজমান, মন্দিরের বাইরের দেয়ালের কারুকাজ দেখে অবাক হবেন, এমন সুন্দর। এর পরেই রাজস্থানের চেকপোস্ট, রাস্তা গেছে উদয়পুরের দিকে। সময় থাকলে খোঁজ করুন আশেপাশের প্রাচীন বৌদ্ধ মঠের -- একটার খোঁজ পেয়েছিলাম, কিন্ত বিবরণে অতি দুর্গম জেনে দেখা হয় নি

পোলো'র জঙ্গল প্রায় এক হাজার বছরের আগে পরিহার বংশের রাজা এখানে তার রাজধানী বানিয়ে ছিলেন, হার্নাভ নদীর পাশে, ৪০০বর্গ কিলোমিটার ছড়ানো এই গুজরাট-রাজস্থান সীমান্তের ঘন জঙ্গলে - - বলা হতো, এখানে মাটিতে সূর্যেরআলো পৌঁছায় না, এমনই ছিল সবুজের আস্তরণ। পরিত্যক্ত এই শহরে আছে খুব সুন্দর প্রাচীন শিব মন্দির, জৈন মন্দির। জঙ্গলে কান পেতে শুনুন হর্নবিল বা বার্বেটের কণ্ঠস্বর, রাত্রে চিতা ভালুক হায়েনা তাদের উপস্থিতি জানায়।

তরঙ্গা পাহাড়। আরাবল্লীর এক বিস্তার এই পাহাড় ভিন প্রদেশের পর্যটকদের কাছে খুব পরিচিত না, বেশখানিটা নির্জন রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছতে হয়, তারপরেই সেই কাছে আসার হাতছানি। পাহাড়ী রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল, এক পাস দিয়ে এক ক্ষীণতনু এক স্রোতস্বিনী নিজের তালে নেমে আসছে। উঁটের পিঠের মতো উতরাও-চড়াও পথের শেষে মিলবে জৈনদের এক প্রসিদ্ধ মন্দির। ফিরে যান সমতলে, একটু এগিয়েই পাবেন পুরানো বৌদ্ধ গুফা, সরকারী প্রকল্পে যার সংস্কার চলছে। উঁচুতে পাহাড়ের ওপরে আছে আরও এক বৌদ্ধ সাধনা স্থল, জঙ্গলে ঢেকে গেছে সেখানে পৌঁছানোর পথ

এই হলো পাহাড়ের একপাশের গল্প, গুজরাটের। ও পাশের গল্প করবো পরের বার।

No comments:

Post a Comment