Tuesday, August 24, 2021

কুহেলী আরাবল্লীর হাতছানি (৩)

 

কুহেলী আরাবল্লীর হাতছানি (৩)

একবার উদয়পুরে ঠাইঁ নিয়েছেন তো একটা বড় সুবিধা হলো, আসেপাশের ভ্রমণের জায়গাগুলো দেখার জন্য সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ফেরা যায় বিনা ক্লান্তিতে। যেমন একশো কিলোমিটারের সামান্য বেশি দূরত্বের চিত্তোরগড়, হাইওয়ে এতই মসৃন ও বাধাহীন যে মনে হবে কোনো বিমানবন্দরের রানওয়ে। চিত্তোর যাবার আগে তার ব্যাপারে একটু পড়াশোনা করে নিলে ভালো হয়, যদিও দেখবেন স্থানীয় গাইডরা মাছির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অষ্টম শতাব্দীর এই রাজপূত রাজধানী ভারতের সব চাইতে বড় দুর্গ ছিল সারা চিত্তোরগড় আপনি গাড়ি নিয়ে ঘুরতে পারবেন, এক রাস্তায় প্রবেশ ও অন্য রাস্তায় নির্গমন। দেখুন মীরার মহল ও মন্দির, জহরব্রতের জায়গা, নানান মন্দির, পদ্মিনীর মহল ও জলাশয় (এবার গিয়ে দেখলাম সেই আয়নাটা গায়েব, যাতে পদ্মিনীর প্রতিচ্ছবি দেখে আলাউদ্দীন এক নম্বর কমান্ডমেন্ট ভঙ্গ করেছিল) - - ফেরার পথে অবশ্যই কিছুটা সময় দেবেন "সুরজপোল"-এ,  আক্রমণকারী দিল্লীর মালিকেরা(আফগান ও মুঘল) এই পথেই ঢুকতো দুর্গ জয় করার জন্য, প্রতি অধ্যায়ের শেষ হতো জহরব্রত দিয়ে।

উদয়পুর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে আছে "রাজসামান্দ লেক". শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার এগোলেই পড়বে এক অভয়ারণ্য, ঘন জঙ্গলে দুপাশ ঢাকা, আড়াল থেকে তীক্ষ্ণস্বরে ডেকে পাখার ঝাপ্টা মেরে পালিয়ে গেলো নাম না জানা পাখী, কোথাও জলাশয়ের পাড়ে এক চক্ষু বুজে দাঁড়িয়ে আছে ঢ্যাঙা এক ভিনদেশী বক, নির্জন নিঃসঙ্গ আলোআঁধারী পরিবেশ। কিছুক্ষন পরেই আসবে "রাজসামান্দ লেক", পাহাড়ের কোলে ছড়ানো --  এক সুন্দর শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে যাকে ছবির মতো দেখায়। সতেরোশ শতকে মেবারের রানা রাজসিং নির্মাণ করেছিলেন এই লেক। সুন্দর শ্বেতপাথরে বাঁধানো ঘাটে বসে দেখুন চারপাশের ছবি, কাঁচের মতো টলটল পরিষ্কার জলে দেখুন ভেসে যাওয়া মেঘের ছায়া আর থেকে থেকে জল থেকে ছলাঙ মারা রুপালী মাছেদের হুটোপুটি।

হালদিঘাট যুদ্ধের পরেও দুই দশক বেঁচে ছিলেন প্রতাপ, নতুন রাজধানী বানিয়েছিলেন উদয়পুর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে, চাভান্ড গ্রামে, রাজসামান্দ থেকে ৩০ কিলোমিটারের মতো দূরে, সরু রাস্তা ধরে ছোট ছোট গ্রামের মধ্যে দিয়ে গাড়ির রাস্তা। চাভান্ড থেকে দুই কিলোমিটার দূরে, বাডোলি গ্রামে, এক নদীর পাড়ে প্রতাপের শেষকৃত্য করা হয়। লোকালয় থেকে অনেক দূরে থাকা এই সমাধিতে কিছুক্ষন সময় কাটান, সেই পরাক্রমী রাজপুতের স্মরণে। এই জায়গা সাধারণ পর্যটকদের জানার বাইরে, কোনোদিন উদয়পুর আসলে অবশ্যই খোঁজ নেবেন।

সাতদিনের প্রোগ্রাম শেষ, ঘরে ফেরার সময় এলো -- সকালে হোটেলে প্রাতঃরাশ সেরে রওনা দেওয়া আহমেদাবাদের রাষ্ট্রীয় সড়ক মার্গে, রাস্তায় কেনা হলো বার্গার ব্রেড চীজ বিস্কুট ইত্যাদি, সাথে আছে ফ্লাস্কের গরম জল আর টি-ব্যাগ। অনেক ভালো জায়গা পাবেন রাস্তায় জিরোবার জন্য, এখন তো আর তাড়া নেই.ঘরে ফেরার। গান্ধীনগর ঢুকতেই পড়ন্ত বিকেলে, আর ২০ কিলোমিটার পরেই আহমেদাবাদ।

মাথায় এখন আছে হয় জয়সলমীর (৩ দিন যথেষ্ট) নয়তো ধোলাভিরা (হরাপ্পা সংস্কৃতির অবশেষ, বিরাট বৃষ্টির জল ধরে রাখা কুয়া ইত্যাদি) ছুঁয়ে কচ্ছ সীমান্ত আদি ঘুরে আসা (৪/৫ দিন ধরে রাখুন) -- নয়তো ইন্দোর-বিদিশা-সাগর- এলাহাবাদ-হাজারীবাগ-কলকাতা-আহমেদাবাদের (এটা প্রায় ২২০০ কিলোমিটার, সব মিলিয়ে দিন কুড়ির ভ্রমণ।


No comments:

Post a Comment